রাতে ইন্টারনেট থাকবে না। বা থাকলেও গতি এত কম যে, কিছুই করা যাবে না। কিন্তু পরের দিন রাস্তায় ফের নামতে হবে। জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন থামানো যাবে না। আবার গ্রেপ্তার হওয়াও যাবে না। তাই রাতের বেলায় অনেকটাই আত্মগোপনে থাকেন আন্দোলনকারীরা।
প্রতিদিনই বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে ও নির্বাচিত নেতা অং সান সু চিসহ বন্দি কয়েক শো নেতাদের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় ঐক্যবদ্ধ বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ। তারা মিছিলে হাঁড়ি-পাতিল বাজায়, সংহতির প্রতীক তিন আঙ্গুল দেখায়, গলা ছেড়ে স্লোগান দেয়।
পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সরকারি কর্মচারি থেকে শুরু করে কারখানার শ্রমিকদের ধর্মঘট চলছে।
কিন্তু দিনের বেলায় রাস্তা কাঁপানো বিক্ষোভকারীদের মধ্যে রাত নামলেই ভীতি কাজ করে। একদিকে মিয়ানমারের প্রধান শহরে রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত কারফিউ; অন্যদিকে রাতে ইন্টারনেট বন্ধ করার মতো ডিজিটাল কারফিউ। আছে গ্রেপ্তার আতঙ্কও।
সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণের ঘোষণা দেয়ার আগে ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইয়াঙ্গুনের উপকণ্ঠে বাস করা মিয়ানমারের প্রখ্যাত লেখক ও ইতিহাসের অধ্যাপক মং থর চোকে তুলে নিয়ে যায় সেনারা। গত প্রায় ২০ দিন ধরে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি কোথায় আছেন, তা জানেন না তার স্বজনরা।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এমন ঘটনা অহরহই হচ্ছে। সেনারা আন্দোলনে অংশ নেয়া নেতা-কর্মীকে তুলে নিয়ে তাদের আটক করে রাখে নয়তো মামলা দেয়।
দেশটির অনেক নাগরিক সিএনএনকে জানায়, রাত বা ভোরবেলায় ঘরে হানা দিয়ে বিছানা থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় তুলে নেয়ার ভয়ে থাকেন তারা।
দিনের বেলা নির্ভীকভাবে মিছিল শেষে রাতের বেলা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা গ্রেপ্তার এড়াতে নিজেদের ঘরে না থেকে এক রাত এখানে তো পরের রাত অন্য কোথাও থাকছেন। এটাই এখন তাদের রোজকার রুটিন।
রাতের বেলা লুকিয়ে থাকা মিয়ানমারের আলোচিত মানবাধিকার কর্মী ২৯ বছর বয়সী থিনজার শুনলেই ই বলেন, ‘এটি শুধু শারীরিক নয়, মানসিক লড়াইও। দিনে বিক্ষোভ আর রাতে শঙ্কা নিয়ে থাকা এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বিক্ষোভে আছি। কারণ জনগণ ও সেনাবাহিনীকে জানানো জরুরি, আমাদের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা অকার্যকর। জাতিগত বিভিন্ন সম্প্রদায়সহ সবাইকে নিয়ে মিয়ানমারকে সংকট নিরসনের নতুন পথ বের করতে হবে।’