অনেক দেশ প্রহর গুনছে কখন তাদের নাগরিকরা ভ্যাকসিন পাবে এবং সার্স-সিওভি-টু ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শরীরকে উপযুক্ত করে তুলবে। এভাবে সবাই টিকা নিতে থাকলে সংক্রমণের গতিও কমে আসবে। এমনকি পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নেবে করোনা গোত্রের অতিসংক্রামক ভাইরাসটি।
বাজারে সবচেয়ে কার্যকর ভ্যাকসিন বা টিকা এলেও টিকাদানের সীমাবদ্ধতার কারণে তথাকথিত হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হবে না। কারণ একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে টিকাদান কোন পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত হলে হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হবে, এ তথ্য আজও অজানা। তাছাড়া ভাইরাসের নতুন নতুন প্রকরণ টিকার কার্যকারিতাকে দুর্বল করে রাখবে।
করোনাকে কি নির্মূল করা যাবে?
বিশ্বে এখন পর্যন্ত যেসব রোগের টিকা উদ্ভাবন করা হয়েছে, সেসবের মধ্যে কেবল গুটিবসন্তের টিকা স্থায়ীভাবে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে অন্যরা কখনও সংক্রমিত হয়নি। এভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে গুটিবসন্ত।
পোলিও ভাইরাসের জন্য উর্বর ক্ষেত্র মানুষের শরীর। ব্যাপক হারে টিকা নেয়ার পর এখনও কিছু দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী মিলছে।
ধারণা করা হয়, সার্স-সিও ভি-টু ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বাদুড় থেকে। মানুষের পাশাপাশি বিড়াল, গরিলাসহ অনেক পশুকে আক্রান্ত করছে এই করোনাভাইরাস। তাই করোনাভাইরাসকে নির্মূল করতে প্রাণীর প্রায় সব প্রজাতি থেকে এটিকে নির্মূল করতে হবে, যা প্রায় অসম্ভব।
নির্মূল কী?
সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যখন নতুন করে কেউ আক্রান্ত হয় না, তখন সে এলাকা থেকে রোগটি নির্মূল হয়েছে বলে ধরা হয়। কিন্তু ঠিক কতদিন কেউ আক্রান্ত না হলে নির্মূল ধরা যাবে, এ ব্যাপারে কোনো ঐকমত্য নেই। করোনার ক্ষেত্রে এ সময়টাকে ২৮ দিন ধরার একটি প্রস্তাব আছে। এ ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সীমান্ত বন্ধ করে দীর্ঘ সময় সংক্রমণ রুখতে পেরেছিল জেসিন্ডা অরডার্ন সরকার। তবে ভ্রমণসুবিধা খুলে দেয়ার পর আবারও নতুন সংক্রমণ ধরা পড়ে নিউজিল্যান্ডে।
ভ্যাকসিন কি কোভিড-১৯ নির্মূল করতে পারবে?
ঠিক কতসংখ্যক মানুষের মধ্যে ইমিউনিটি তৈরি হলে করোনা পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে, তা বলা মুশকিল। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৫ থেকে ৮২ শতাংশ মানুষের মধ্যে ইমিউনিটি তৈরি হলে করোনা নির্মূল করা সম্ভব। এটা হতে পারে টিকা নিয়ে অথবা আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠার মাধ্যমে।
এদিকে ব্রাজিলের আমাজোনাস প্রদেশে ৭৬ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পরও সেখানে করোনা সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। তবু আগে আক্রান্ত হয়ে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়ার চেয়ে টিকার মাধ্যমে পাওয়া রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা জোরালো বলে গণহারে টিকায় জোরালো ফল পাওয়া যাবে, এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই।
টিকা কতটুকু কার্যকর হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না ও জার্মানি-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগে উদ্ভাবিত বায়ো-এন-টেকের টিকা করোনা ঠেকাতে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফল প্রমাণিত হয়েছে। এই দুই প্রতিষ্ঠান বলছে, তাদের ভ্যাকসিন ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর।
এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনার টিকা নিয়েছে ইসরায়েলে। গুরুতর অসুস্থ ও বয়স্কদের প্রাধান্য দিয়ে টিকা দেয়া হচ্ছে। ইসরায়েলি গবেষকেরা বলছেন, টিকা নেয়ার পরও যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তারা অল্পতেই সেরে উঠছেন। টিকা গ্রহণকারীদের থেকে সংক্রমণের আশঙ্কাও অনেক কম। তবে এ ধারণার এখন পর্যন্ত শক্ত ভিত্তি খুঁজে পাননি চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা।
এটা কি আশাব্যঞ্জক?
করোনার বিরুদ্ধে টিকার ভূমিকা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু সব সময় এমনটি ঘটে না।
হামের টিকা নেয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা নেই। অন্যদিকে হুপিং কাশির টিকা ওই রোগ জটিল আকার নেয়া ঠেকাতে পারে বটে, কিন্তু কফ থেকে অন্যের শরীরে সংক্রমণ ঠেকানোর ক্ষেত্রে তা কম কার্যকর।
মডার্নার করোনা ভ্যাকসিন বানরের শরীরে প্রয়োগ করে দেখা গেছে, এটি অন্যের শরীরে সংক্রমণ পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারলেও কমাতে পারে।
কীভাবে করোনার ধরন পাল্টাচ্ছে?
করোনা সময়ের সঙ্গে ধরন পাল্টাচ্ছে। এতে টিকা উদ্ভাবনকারীদের বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। দীর্ঘ সময় বিভিন্ন অঞ্চলের নানা আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নতুন রূপে আবির্ভূত হচ্ছে করোনা। এটি ভাইরাসের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
করোনা চলে গেলে কী হবে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে, চলে গেলেও অনেক জনগোষ্ঠীতে পোষকদেহ খুঁজে বেড়াবে করোনাভাইরাস। মাঝেমধ্যে এটির প্রাদুর্ভাব দেখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মানুষের অসচেতনতা বড় ভূমিকা রাখবে।
করোনার অ্যান্টিবডি কতদিন কার্যকর থাকে?
যারা করোনায় আক্রান্তের পর সুস্থ হয়েছেন অথবা যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তারা কিছু দিনের জন্য নিরাপদ। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ফ্রেড হাচিনসন ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা থেকে সেরে ওঠা রোগীদের অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় দেখা গেছে, তা চার থেকে আট মাস করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সক্ষম।