বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলনে এবার ভিন্ন কৌশলে হাঁটছেন ভারতের কৃষকরা। এরই অংশ হিসেবে দিল্লির গাজিপুর ও সিনঘু সীমান্তে টানা প্রায় তিন মাস অবস্থানের পর গ্রামে ফেরা শুরু করেছে তাদের বড় একটি অংশ।
মঙ্গলবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।আন্দোলন ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষকরা জানান, এটি স্পষ্ট, কৃষক আন্দোলন দীর্ঘ যুদ্ধ হতে যাচ্ছে। সীমান্তে জমায়েত কম রাখা আন্দোলনের নতুন কৌশল। তারা বলেন, আন্দোলনের সমর্থনে বিভিন্ন রাজ্যে বড় সমাবেশের আয়োজন এ কৌশলের মূল লক্ষ্য।
কৃষক নেতা রাকেশ তিকাইত দেশজুড়ে মহাপঞ্চায়েতের পরিকল্পনা করেছেন। হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থান রাজ্যে আগামী ১০ দিনে বেশ কয়েকটি মহাপঞ্চায়েতে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে তার।
রাকেশ বলেন, ‘দিল্লি সীমান্তে যদি ১০ লাখ মানুষ জড়ো হয়, তাহলে কি সরকার কৃষি আইন বাতিল করবে? আমরা দেশজুড়ে প্রতিবাদ করব। সব জেলায় আমরা ছড়িয়ে পড়ছি। সেখানে সমাবেশ হচ্ছে।’
গাজিপুর প্রটেস্ট কমিটির মুখপাত্র জাগতার সিং বাজওয়া বলেন, ‘সরকারের জেদ মাথায় রেখে শুরুতে দিল্লি সীমান্তে বিক্ষোভ কেন্দ্রীভূত করা হয়। কৃষক নেতারা এখন তাদের কৌশল পরিবর্তন করে আন্দোলন বিকেন্দ্রীকরণ করছেন। এতে প্রত্যেক গ্রামের ঘরে ঘরে আন্দোলন পৌঁছে যাবে। বিভিন্ন জায়গায় আমরা মহাপঞ্চায়েতের আয়োজন করছি।
‘তরুণদের শক্তি আমাদের কাজে লাগাতে হবে, যাতে আন্দোলনের বার্তা ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষকরা তাদের কাজও করতে পারেন। সীমান্তেই শুধু নয়, ক্ষেতে কাজ করা এক জন কৃষকও এখন এ আন্দোলনের অংশ।’
কৃষক নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বল্পসময়ের নোটিশে দিল্লি সীমান্তে যেকোনো সময়ে জড়ো হতে পারবেন তারা।
এ বিষয়ে বাজওয়া বলেন, ‘গাজিপুর সীমান্তে প্রয়োজন হলেই এক লাখ কৃষক জড়ো করা যাবে।’
তিনটি কৃষি আইন বাতিল ও উৎপাদিত শস্যের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণের দাবিতে গত বছরের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে দিল্লি সীমান্তে অবস্থান নেন হাজার হাজার কৃষক। আন্দোলনরত কৃষকদের একটি বড় অংশ পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের।
নতুন আইনের ফলে কৃষকদের শঙ্কা, তাদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে ফসল কিনতে সরকার যেমন বাধ্য থাকবে না, তেমনি বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণও থাকবে না। দামদর নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা চলে যাবে কোম্পানিগুলোর হাতে। এতে কোম্পানিগুলোর দয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে যেতে পারে তাদের জীবন।
গত দুই মাসে ভারত সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কৃষকদের কয়েক দফা বৈঠক ভেস্তে যায়। সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ মাসের জন্য ওই তিন কৃষি আইন স্থগিতের কথা বলা হয়, যা প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনরত কৃষকরা।