করোনাভাইরাসের মধ্যে বিদেশিদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল বিভিন্ন দেশ। তবে এখন ধীরে ধীরে শিথিল হচ্ছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। টিকা আসার পর বিভিন্ন দেশ এবার জোর দিচ্ছে ভ্যাকসিন পাসপোর্টের ওপর। অচিরেই এ সব দেশে ভ্রমণে বাধ্যতামূলক হতে পারে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট।
স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য ভ্রমণে করোনা টিকা ও পরীক্ষার সনদ বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। এছাড়া, বিভিন্ন দেশের সরকার সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট সিস্টেম চালুর বিষয়ে জোর আলোচনা চালাচ্ছে।
কিছু দেশে অভ্যন্তরীণ রুটে ভ্রমণ এবং কর্মীদের ফের অফিসে ফেরার ক্ষেত্রেও এই সনদের প্রয়োজন হবে।
ভ্যাকসিন পাসপোর্ট/ সার্টিফিকেট কী
কোনো ব্যক্তি করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার পর তাদের একটি অফিসিয়াল কার্ড বা ডিজিটাল সার্টিফিকেট দেয়া হবে। এই কার্ড নিশ্চিত করবে, ওই ব্যক্তি টিকা নিয়েছেন। কার্ড যাচাইয়ের জন্য থাকবে বিশেয় ধরনের অ্যাপ।
ভ্রমণকারীকে এই কার্ড সীমান্তবন্দর অথবা এয়ারলাইন্সে দেখাতে হবে। ফলে টিকা নেয়া ছাড়া কেউ বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পাবেন না।
ব্রিটিশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এমভাইন এবং আইপ্রোভ ভ্যাকসিন পাসপোর্ট তৈরির কাজ করছে। তাদের সহায়তা করছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস।
ভ্যাকসিন পাসপোর্ট বা সার্টিফিকেট কি নতুন?
ভ্যাকসিন পাসপোর্ট বা সার্টিফিকেট বিভিন্ন দেশে অনেক আগে থেকেই ব্যবহার হচ্ছে। যুক্তরাজ্য ভ্রমণে কয়েকটি দেশের নাগরিকদের যক্ষা পরীক্ষার সনদ জমা দিতে হয়। এছাড়া পিতজ্বর এবং পোলিওর সার্টিফিকেটও লাগে অনেক দেশের নাগরিকদের।
এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন
অস্ট্রেলিয়ান এয়ালাইন্স কান্তাস বলছে, তাদের বিমানে চড়ার আগে করোনাভাইরাস টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ইত্তেহাদ ও এমিরেটস এয়ারলাইন্সও বলছে, শিগরিই এ ধরনের সনদ বাধ্যতামূলক করা হবে। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন এই ট্রাভেল পাস তৈরি করছে।
পাঁচ দশক পুরোনো ট্রাভেল কোম্পানি সাগা জানিয়েছে, এ বছর থেকেই তাদের সেবা পেতে অবশ্যই টিকা নিতে হবে।
ভ্যাকসিন পাসপোর্ট নিয়ে সংশয়
মানবাধিকার কর্মী ও গবেষণা সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, এ ধরনের পরিচয়পত্র বৈষম্য বাড়াবে। তারা বলছেন অনেকেই টিকা নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। আবার কেউ কেউ টিকা নিতে আগ্রহী নয়।
তারা আরও বলছেন, ধনী দেশগুলো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টিকা সংগ্রহে রেখেছে। বিপরীতে অনেক গরিব দেশে টিকা দেয়া এখনও শুরু হয়নি।
টিকার কারণে সমাজে বৈষম্য বাড়ার পাশাপাশি যারা টিকা পাননি বা নিতে আগ্রহী নন, তারা মাসের পর মাস এমনকি বছর পেরিয়ে গেলেও দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে পারবেন না।
কোন কোন দেশ ভ্যাকসিন পাসপোর্ট নিয়ে ভাবছে
গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোটাকিস ভ্যাকসিন কার্ডের পক্ষে জোর প্রচার চালাচ্ছেন। অন্যদিকে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ইসরায়েলের সঙ্গে বেলজিয়াম সরকারের একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী, টিকা নেয়া ব্যক্তিরা তেল আবিবে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করছেন, পরীক্ষামূলকভাবে অন্য দেশও এই ব্যবস্থা চালু করবে।
বিদেশ ভ্রমণে যেতে চাইলে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট লাগবে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ভ্যাক্সিনেশন কার্ডকে স্বাগত জানিয়েছে স্পেন। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তার দেশের প্রতিটি নাগরিক যেন টিকা পায়, সে দিকে নজর রাখছে সরকার।
ভ্যাকসিন নিয়েছে ইউরোপের এমন নাগরিকদের ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছে দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাস। অন্যদিকে, বিদেশ ভ্রমণে নাগরিকেরা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য ডিজিটাল ভ্যাকসিন পাসপোর্ট তৈরি করছে ডেনমার্ক সরকার।
ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট থাকলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিজ নাগরিকদের ভ্রমণে কোনো বাধা থাকবে না বলে জানিয়েছে পর্তুগাল সরকার। আইসল্যান্ড সরকার টিকার দুটি ডোজ নেয়া নাগরিকদের ই-ভ্যাক্সিনেশন সার্টিফিকেট দিচ্ছে।
সাইপ্রাস প্রেসিডেন্টের হাতে ভ্যাক্সিনেশনের সার্টিফিকেট।
ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নেয়ার পর কসোভোর নাগরিকদের সনদ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এল পেইস গোটা ইউরোপজুড়েই ভ্যাকসিন কার্ড দেয়ার চিন্তাভাবনার কথা জানিয়েছে।