রাজ্যসভায় নাটকীয়ভাবে সাংসদ পদ ও তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্যপদ ত্যাগ করলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী।
শুক্রবার সাধারণ বাজেটের ওপর আলোচনার সময় তিনি বলেন, ‘আমার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে সর্বত্র হিংসাত্মক ঘটনা ঘটছে। অথচ আমরা কিছু বলতে পারছি না। আমি রবীন্দ্রনাথ, নেতাজির ভূমি থেকে আসা মানুষ। তাই এটা আমি আর দেখতে পারছি না।
‘আমি একটি দলে আছি। তাই দলের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হচ্ছে। কিন্তু আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। এর চেয়ে ইস্তফা দিয়ে বাংলা এবং দেশের স্বার্থে কাজ করা ভালো। আমি আমার অন্তরের ডাক শুনেছি। সবাইকেই কখনও না কখনও অন্তরাত্মার ডাক শুনতে হয়।’
দীনেশের এই ঘোষণা শুনে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিং বলেন, ‘এভাবে ইস্তফা দেয়া যায় না। এর একটি পদ্ধতি আছে। আপনি রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে লিখিতভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিন।’
তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্যের এই নাটকীয় ইস্তফা ঘিরে বেজায় অস্বস্তিতে দল। দীনেশকে পাল্টা খোঁচা দিয়ে রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের চিফ হুইপ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘এত ঘন ঘন দমবন্ধ হয়ে আসলে তো খুব চিন্তার ব্যাপার।’
দুইদিন আগে লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তৃতার প্রশংসা করেছিলেন দীনেশ। বৃহস্পতিবারই দীনেশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি টুইটকে ‘রিটুইট’ করেছিলেন। তখনই আবহাওয়া ঘুরছে বোঝা যাচ্ছিল। দলের সূচনা লগ্ন থেকে তিনি রয়েছেন। তৃণমূল থেকে প্রথম রাজ্যসভায় যান তিনি। দলের প্রথম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।
দীনেশ ২০১৪ সালে ব্যারাকপুর লোকসভা আসন থেকে জিতেছিলেন। ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে ওই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের হয়ে লড়ে হেরে গিয়েছিলেন। জিতেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যাওয়া অর্জুন সিং। তারপর অবশ্য মমতা দীনেশকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসেন।
দীনেশ ত্রিবেদীর পদত্যাগের ঘোষণার পর সুখেন্দুশেখর রায় কটাক্ষ করে বলেন, ‘লোকসভায় হেরে যাওয়ার পর তখন একবার তার (দীনেশ) দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে-পায়ে ধরে বলেছিলেন, আমার কিছু একটা করুন।
‘সেই সময় তাকে রাজ্যসভায় পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। এদিন আবার তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। হয়তো বিজেপিতে যাবেন। তারপর যদি দেখেন নরেন্দ্র মোদি হারতে বসেছেন, তখন আবার দম বন্ধ হয়ে আসবে। এমন ঘন ঘন দম বন্ধ হয়ে আসলে তো খুব চিন্তার ব্যাপার।’
এদিন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যানের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর।
বলেন, ‘রাজ্যসভায় বাজেটের ওপর তৃণমূলের দুই জনের বলার কথা ছিল। দীনেশের বলার কথা ছিল না। যখন রাজ্যসভায় আমাদের দলের বলার সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল, তখন চেয়ারম্যান কেন ওকেই বাজেট নিয়ে বলতে দিলেন! এটা তো নজিরবিহীন।
‘কিন্তু অধিবেশন শুরুর পর শাসক দল বিজেপিকে ম্যানেজ করে বলার জন্য সময় বরাদ্দ করিয়েছেন দীনেশ। আগেই সব ঠিকঠাক করা ছিল, না হলে ডেপুটি চেয়ারম্যান তাকে সময় দিতে পারেন না আচমকা।
‘আমাদের ধারণা, ওকে কথাগুলো বলার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এটা আমরা ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে দেখব। যাদের দম বন্ধ হয়ে আসছে তারা দ্রুত চলে গেলেই ভালো। এতে দলের কোনো ক্ষতি হবে না।’
দীনেশ ত্রিবেদীর বিজেপিতে যোগ দেয়াটা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় থেকে দিলীপ ঘোষ, গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্র ও রাজ্য নেতৃত্ব এরইমধ্যে দীনেশ ত্রিবেদীকে দলে স্বাগত জানিয়েছেন। এই আবহেই এক কদম এগিয়ে লোকসভায় ভোটের প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে ‘দাদা’ বলে সম্বোধন করেছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং।
দীনেশকে বিজেপিতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে অর্জুন বলেছেন, ‘দাদা চলে আসুন বিজেপিতে।’