মিয়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারের অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) সমর্থকেরা।
সামরিক অভ্যুত্থানের নেতাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ আরোপের পর শুক্রবার বিক্ষোভ সমাবেশে তারা এ আহ্বান জানান বলে দ্য ন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ছয় দিনের মাথায় বুধবার দেশটির সেনাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে এনএলডি সমর্থকেরা বলেন, সেনাদের গদি থেকে নামাতে এবং গত বছরের নির্বাচনে এনএলডির নিরঙ্কুশ বিজয়ে সেনাবাহিনীকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও কড়া ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেয়া ২৯ বছর বয়সী সু চির সমর্থক মো থাল বলেন, ‘সেনাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের চেয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ আমরা আশা করি। প্রতিটা দিন আমরা সেনাশাসনে কষ্ট পাচ্ছি।
‘যত দ্রুত সম্ভব এ পরিস্থিতির অবসান চাই আমরা। মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও জেনারেলদের বিরুদ্ধে আরও শাস্তি ও পদক্ষেপের প্রয়োজন।’
১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, সু চিসহ ২৬০ জনেরও বেশি গণতন্ত্রপন্থি নেতাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সামরিক অভ্যুত্থান করে দেশটির সেনাবাহিনী। এর প্রতিবাদে টানা আন্দোলন করে যাচ্ছেন মিয়ানমারের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, চিকিৎসকসহ হাজারো মানুষ।
ইয়াঙ্গুনে স্কুলশিক্ষকদের প্রতিবাদ সমাবেশ। ছবি: এএফপি
সামরিক অভ্যুত্থানের ছয় দিন পর ৭ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারজুড়ে যে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল হয়, তা ২০০৭ সালে গেরোয়া বিপ্লবের সময়ের মিছিলের পর সবচেয়ে বড় ছিল।
বিক্ষোভের সময় ৫৫ জন বিদেশিসহ গ্রেপ্তার করা ২৩ হাজারেরও বেশি বন্দিকে সাজা মওকুফ করে শুক্রবার মুক্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সেনা সরকার।
মিয়ানমারে ইউনিয়ন ডে উপলক্ষে তাদের মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে সেনাবাহিনী থেকে বলা হয়েছে।
১৯৪৭ সালে সু চির বাবা অং সানের নেতৃত্বাধীন মিয়ানমার সরকার এবং শান, কাচিন ও চিন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে দেশটিতে প্রতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়ন ডে পালিত হয়ে আসছে। এদিন কিছু বন্দিকে মুক্তি দেয়া রেওয়াজে পরিণত হয়েছে মিয়ানমারে।
রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, শান্তি, উন্নয়ন ও শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্যে বন্দিদের সাজা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ সিদ্ধান্ত জনগণকে খুশিও করবে।
রাজধানী নেপিদোতে বিক্ষোভ চলাকালে জলকামান ছোড়ে মিয়ানমার পুলিশ। ছবি: এএফপি
বৃহস্পতিবার সরকারি কর্মচারীদের কাজে ফিরতে আহ্বান জানান সামরিক অভ্যুত্থানের নেতা ও সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে গণজমায়েত বন্ধ করতে বিক্ষোভকারীদের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।