কৃষক আন্দোলন ঘিরে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারের বিরোধ দিনকে দিন বাড়ছে। বিরোধ নিরসনে টুইটারের নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভারতের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তার ভার্চুয়ালি বৈঠক হয়েছে।
বুধবারের ওই বৈঠকে টুইটারকে বলা হয়, ভারতে ব্যবসা করতে তাদেরকে স্বাগত। তবে টুইটারের নিজস্ব আইন ও নীতিমালা যা-ই থাকুক না কেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই জায়ান্টকে ভারতের আইন মেনে চলতে হবে।
বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ভারতে চলমান কৃষক আন্দোলন নিয়ে টুইট ও টুইটার অ্যাকাউন্টধারীদের ঘিরে বিজেপি সরকার ও টুইটারের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
দিল্লি সীমান্তে গত বছরের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া শান্তিপূর্ণ কৃষক আন্দোলন চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে সহিংসতায় রূপ নেয়। ওই দিন পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে এক কৃষক নিহত হন। আহত হয় শ খানেক পুলিশ।
আন্দোলন দমাতে উত্তেজনাপূর্ণ হ্যাশট্যাগ, শিখ ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ অ্যাকাউন্ট ও ‘পাকিস্তান সমর্থিত’ টুইট সরাতে টুইটারকে আহ্বান জানায় ভারত সরকার।
ভারত সরকারের আইনি নোটিশে সাড়া দিয়ে আড়াই শটির মতো অ্যাকাউন্ট প্রথমে ব্লক করে টুইটার। কিন্তু ওইসব ব্লকের ক্ষেত্রে ‘ন্যায্যতা অপর্যাপ্ত’ উল্লেখ করে ছয় ঘণ্টা পর অ্যাকাউন্টগুলো ফের চালু করে টুইটার।
বিবিসির সাংবাদিক সৌতিক বিশ্বাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, টু্ইটারের এ পদক্ষেপে নাখোশ হয় মোদি সরকার। রূঢ় এক বিবৃতিতে টুইটারকে ওইসব অ্যাকাউন্ট আবার ব্লকের নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ অমান্য করলে ভারতে কাজ করা টুইটারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা এমনকি সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডেরও হুমকি দেয়া হয়।
বুধবার টুইটারের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্ররোচনা ও সহিংসতাসংক্রান্ত নীতিমালা ভঙ্গের দায়ে পাঁচ শর বেশি অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়।
তবে একই সঙ্গে টুইটার জানায়, সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনীতিকদের অ্যাকাউন্ট ব্লক করা সম্ভব না। কারণ এটা করলে ভারতের সংবিধান অনুযায়ী মত প্রকাশে তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ বলেন, ভুয়া খবর ও সহিংসতা ছড়ালে সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ফেসবুক, টুইটারসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নামোল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতে আপনাদের কোটি কোটি ফলোয়ার রয়েছে। এখানে আপনারা ইচ্ছামতো ব্যবসা ও টাকা কামাতে পারবেন। তবে ভারতের সংবিধান মেনে তা করতে হবে।
ভারত সরকারের উদ্দেশে ডিজিটাল অধিকারকর্মী ও প্রযুক্তি নীতিসংক্রান্ত ওয়েবসাইট মিডিয়ানামার সম্পাদক নিখিল পাহওয়া বলেন, সরকার যদি মনে করে টুইটার আইন ভঙ্গ করেছে, তাহলে বক্তৃতাবাজির বাইরে গিয়ে ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। বিবৃতি দেয়া, বৈঠক করার তো কোনো প্রয়োজন দেখছি না যখন আপনারা মনেই করেন তারা আইন মানছে না? তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে কে আটকাচ্ছে?