যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও মডার্না থেকে চাহিদামতো টিকা না পেয়ে ভারতের দ্বারস্থ কানাডা। উপায় না পেয়ে সাম্প্রতিক বিভেদ ভুলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ফোন করেছেন নরেন্দ্র মোদিকে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানালেন, এই ফোনকল পেয়ে ভালো লাগছে তার।
কানাডাকে টিকা দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন মোদি। জানিয়েছেন, করোনা মহামারি রুখতে উত্তর আমেরিকার দেশটিতে টিকা সরবরাহে সাধ্যের সবটুকুই করবেন তারা।
করোনাভাইরাস-প্রতিরোধী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টিকা প্রয়োগ চলছে বিশ্বজুড়ে। কিন্তু কানাডা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত টিকায় গুরুত্ব না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার, মডার্নার টিকায় আগ্রহ দেখায় কানাডা।
কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী, কানাডাকে পর্যাপ্ত টিকা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে ফাইজার ও মডার্না। ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে টিকা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান দুটি।
টিকা পাওয়ার ‘ধারা বিঘ্নিত’ হলেও গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, কানাডার জনগণকে সফলভাবে টিকার আওতায় আনা হবে। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ প্রত্যেক কানাডিয়ানকে একবার হলেও টিকা দেয়া হবে।
কিন্তু কোথায় মিলবে টিকা? সহজ কোনো উপায় না পেয়ে ভারতের কৃষক আন্দোলনের জেরে গড়ে ওঠা মান অভিমান ভুলে মোদিকেই ফোন করেছেন।
‘বন্ধুর’ কাছ থেকে ফোনকল পেয়ে খুশির শেষ নেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর। টুইটারে মোদি লিখেছেন- ‘আমার বন্ধু জাস্টিন ট্রুডোর কাছ থেকে ফোন পাওয়াটা ছিল ভালো লাগার। তাকে নিশ্চয়তা দিয়েছি, কানাডা যে পরিমাণ টিকা খুঁজছে, তা সরবরাহ করতে ভারত সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।’
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ‘কোভিশিল্ড’ নামে উৎপাদন করছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। দাম কম ও সংরক্ষণপ্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের কাছ থেকে টিকা কিনছে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকাই নয়, সিরামের মাধ্যমে নিজেদের উদ্ভাবিত টিকা উৎপাদন করতে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করেছে নোভাভ্যাক্স, জনসন অ্যান্ড জনসনসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক নামীদামি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি।
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত কোভিশিল্ড টিকার প্রয়োগ চলছে বাংলাদেশেও। ছবি: নিউজবাংলা
সিরাম থেকে কোভিশিল্ড টিকার তিন কোটি ডোজ কিনেছে বাংলাদেশও। এর মধ্যে ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালান এবং ভারত সরকার থেকে উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ পাওয়ার পর দেশজুড়ে এই টিকার গণপ্রয়োগ বলছে। এ ছাড়া এই টিকার প্রয়োগ চলছে নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ব্রাজিলসহ অনেক দেশে।
বাংলাদেশ সহজ উপায়ে এই টিকা পেলেও সমালোচনার শেষ নেই বিএনপি নেতাদের। কোনো প্রমাণাদি না দিয়েই তারা বলছেন, বেশি দামে ভারত থেকে টিকা কিনেছে সরকার।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এমনও বলেছেন, এই টিকা দিয়ে বিএনপিকে নিধন করতে চায় সরকার। তার দাবি, যথেষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই ভারতে উৎপাদিত টিকাটি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
ভারতের কাছে টিকা চাওয়ার ব্যাপারটি জানিয়েছে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরও। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, টিকা উৎপাদন এবং বিশ্বজুড়ে দেশগুলোতে বিতরণে ভারতের উল্লেখযোগ্য অবদান নিয়ে ট্রুডো ও মোদির মধ্যে আলাপ হয়েছে। টিকা নিয়ে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে বলেও মতৈক্য হয়েছে।
অথচ ভারতের দিল্লিতে কয়েক মাস ধরে কৃষক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মোদি ও ট্রুডোর সরকারের দূরত্ব বেড়েছিল। আন্দোলনরত কৃষকদের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিল কানাডা, যা ভালোভাবে দেখেনি ভারত সরকার।