মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে দেশটির জনগণ। সেনাবাহিনীর বন্দুকের নল, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তারা। আর এসব বিক্ষোভে ব্যাপক অংশগ্রহণ গত শতকের শেষ দশক ও চলতি শতকের শুরুর দশকের দিকে জন্ম নেয়া প্রজন্মের।
প্রেম ব্রেকিং ইত্যাদি ভাষায় জড়িয়ে আন্দোলনে সেনাবিরোধী স্লোগান আরও জোরালো করে তুলছে এসব তরুণ তুর্কি। স্বৈরশাসনবিরোধী তরুণদের নিন্দা প্রতিবাদের কিছু খণ্ডচিত্র তুলে ধরেছে বিবিসি।
একটি বিক্ষোভে এক জনের হাতে দেখা যায় এমন একটি প্ল্যাকার্ড, যাতে লেখা- ‘আমার এক্স (সাবেক প্রেমিক বা প্রেমিকা) খারাপ, কিন্তু মিয়ানমার সামরিক বাহিনী জঘন্য।’
প্রেমের ভাষার মিশেলে লেখা অন্য একটি প্ল্যাকার্ড ছিল এমন- ‘আমি সামরিক একনায়কতন্ত্র চাই না, আমি কেবল বয়ফ্রেন্ড চাই।’
২০০৪ সালের বিখ্যাত ভিডিও গেম ‘গ্র্যান্ড থেফট অটো’ নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া মেমের ‘ওহ, আবারও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটল’ সংলাপটিও লেখা ছিল একটি প্ল্যাকার্ডে।
অন্য এক জনের প্ল্যাকার্ডে লেখাটা ছিল এমন- ‘আমি একটা সম্পর্ক চাই, সামরিক শাসন চাই না।’
গত নভেম্বরের নির্বাচনের অনিয়মের অভিযোগ তুলে অং সান সু চিসহ গণতন্ত্রপন্থি ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) নেতাদের বন্দি করে ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী।
এরপর থেকে সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন চলছে মিয়ানমারে। পুলিশ ও সেনাদের বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে প্রতিবাদ করে যাচ্ছে ছাত্র, শিক্ষক, চিকিৎসকসহ সর্বস্তরের জনগণ, যা এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে নজিরবিহীন।
পুলিশ সোমবার আন্দোলনকারীদের সতর্ক করে জানিয়েছে, তারা যেন রাস্তাঘাটে অবস্থান নেয়া ছেড়ে দেয়। অন্যথায় শক্তি প্রয়োগ করা হবে।
প্রথমবারের মতো অভ্যুত্থান নিয়ে মুখ খুলেছেন মিয়ানমারের ক্ষমতায় বসা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছেন, গত নভেম্বরে নির্বাচন মোটেও সুষ্ঠু ছিল না। নতুন করে নির্বাচন দেবেন তিনি। ক্ষমতা তুলে দেবেন নির্বাচিতদের হাতে।
তবে আন্দোলনকারীদের দেখে নেয়ার সরাসরি কোনো হুমকি দেননি সেনাপ্রধান হ্লাইং। কেবল বলেছেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
জনরোষ নিয়ন্ত্রণে বড় বড় শহরগুলোতে কারফিউ আরোপ করা হয়েছে। পাঁচ জনের বেশি জমায়েত না হতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কিন্তু এসব বিধিনিষেধে পাত্তা দিচ্ছে না মিয়ানমারের জনগণ। অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।