ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে স্থানীয় মুসলিম কমিউনিটিও। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের জন্য এই মন্দির নির্মাণে অর্থ দান করেছে তারা।
অযোধ্যার ফায়জাবাদের শহর অযোধ্যার রামভবনে নির্মিত হচ্ছে রামমন্দির। এটি নির্মাণে রোববার অর্থ সহায়তা জমা দেয় সেখানকার মুসলিম কমিউনিটি।
বিষয়টি ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে (এএনআই) নিশ্চিত করেছেন অযোধ্যার মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের সদস্য হাজি সাঈদ আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘রাম সবার এবং রামমন্দিরও সবার। আমরা প্রচুরসংখ্যক মুসলমান এই মন্দির নির্মাণে সহযোগিতা করব।’
হিন্দুধর্মের অনুসারীদের বিশ্বাস, তাদের ধর্মের অন্যতম অবতার রাম ছিলেন অযোধ্যার রাজা। এই অবতারের নামে সেখানে একটি মন্দির ছিল।
একই মত ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদদেরও। তাদের মতে, ১ থেকে ১১০০ শতাব্দীর মধ্যে অযোধ্যায় নির্মিত হয় রামমন্দির। কিন্তু ষোড়শ শতাব্দীর শুরুর দিকে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর দিল্লির মসনদে বসলে এলোমেলো হয়ে যায় সব। অযোধ্যাতে রামমন্দির ভেঙে সেখানে করা হয় বাবরি মসজিদ।
গত শতকের ৮০-এর দশকে বাবরি মসজিদ ও রামমন্দির ছিল ভারতীয় রাজনীতির উত্তপ্ত ইস্যু। এসবের জেরে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদটি গুঁড়িয়ে দেয় একদল উগ্রবাদী হিন্দুধর্মাবলম্বী। এর জেরে ভারতজুড়ে হিন্দু-মুসলিম সহিংসতায় প্রাণ হারায় ৩ হাজারের বেশি মানুষ।
এগিয়ে চলছে রাম মন্দির নির্মাণ কাজ। ছবি: সংগৃহীত
বাবরি মসজিদের জায়গায় রামের নামে আবার মন্দির নির্মাণে দাবি জানিয়ে আসছিল হিন্দুধর্মাবলম্বীরা। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর বিষয়টি গতি পায়।
২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বাবরি মসজিদ ও রামমন্দির ইস্যু নিয়ে করা ঐতিহাসিক অযোধ্যা মামলার রায় দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়, বিতর্কিত ওই পৌনে তিন একর জায়গায় একটি ট্রাস্টের অধীনে রামের নামে নির্মিত হবে মন্দির। আর অযোধ্যাতেই কোনো জায়গায় মুসলমানদের মসজিদ নির্মাণের জন্য পাঁচ একর জায়গার ব্যবস্থা করে দেবে সরকার।
আদালতের রায় মেনে রামমন্দির নির্মাণে এরই মধ্যে গঠন করা হয়েছে ট্রাস্ট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর এগিয়ে চলছে মন্দির নির্মাণের কাজ।
আর অযোধ্যার ধানিপুর গ্রামে নির্মিত হচ্ছে বিশাল এক মসজিদ। এরই মধ্যে উন্মোচন করা হয়েছে নৈসর্গিক এক মসজিদের নকশা।
আদালতের রায়ে রাম মন্দিরের জায়গা থেকে সরে অযোধ্যাতেই নির্মাণ করা হচ্ছে এমন নৈসর্গিক মসজিদ।
মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের সদস্য হাজি সাঈদ মনে করেন, বাবর ও মুঘলরা অযোধ্যায় যা করেছিল, তা সঠিক ছিল না। ভগবান রাম ও তার শিক্ষা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।
তিনি বলেন, ‘ভগবান রাম আমাদের হিন্দুস্তানের ছিলেন এবং আমরাও এই জাতির অন্তর্ভুক্ত। ভগবান রামের বংশ ধরলে আমরা সবাই এক।
‘আমরা ইরাক, ইরান বা তুরস্ক থেকে আসিনি। হিন্দুরা আমাদের ভাই। ভগবান রাম আমাদের পূর্বপুরুষ এবং তার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা আছে।’
রামমন্দিরের জন্য মুসলিম কমিউনিটির অর্থপ্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা রামভবন প্রেসিডেন্ট শক্তি সিং এএনআইকে বলেন, ‘আজ “নিধি সমর্পণ অভিযান” এর মাধ্যমে ফায়জাবাদের মুসলিম ভাইয়েরা অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের জন্য ৫ হাজার ১০০ রুপি দান করেছেন। তারা আমাদের আরও বলেছেন, মন্দির নির্মাণে ভবিষ্যতে তাদের আরও অংশ্রহণ থাকবে।”’
নিধি সমর্পণ অভিযান অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণে তহবিল সংগ্রহের একটি প্ল্যাটফর্ম। শক্তি সিং জানালেন, এই উদ্যোগে কেবল দেশে নয়, বিশ্বেও শান্তি ও ঐক্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মুসলিম কমিউনিটির শাবানা বেগম নামে এক নারী জানালেন, রামমন্দির নির্মাণে অর্থ দিয়ে অবদান রাখছেন তিনিও। তার চাওয়া সহিংসতা শেষ হোক, শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক।
অর্থ সহায়তা দিয়েছেন স্থানীয় সাঈদ মোহাম্মদ ইশতিয়াক মহিলা মহাবিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান ড. সাঈদ হাফিজও। তিনি বলেন, ‘এই ভালো কাজের জন্য দান করতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। মন্দির নির্মাণে অবদান রাখতে মুসলমান ভাইদের এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাতে চাই।’