কোনো অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই জেলে রাখার চার বছরের বেশি সময় পর আল জাজিরার সাংবাদিক মাহমুদ হুসেইনকে মুক্তি দিল মিসর সরকার।
মিসরের স্থানীয় সময় শনিবার দেশটির নাগরিক মাহমুদকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে তাকে অহেতুক কারাবন্দি করে রাখা হয়েছিল।
এক বিবৃতিতে আল জাজিরার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোস্তেফা সোয়াগ বলেছেন, মাহমুদ হুসেইনের কারামুক্তি ‘সত্যবাদিতার একটি মুহূর্ত এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি অনুপ্রেরণামূলক মাইলফলক’।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক মাহমুদের মুক্তির খবরটিকে স্বাগত জানাচ্ছে। পেশাগত দায়িত্বপালনের জন্য গত চারটা বছর মাহমুদকে যা সহ্য করতে হয়েছে, তা যেন আর কোনো সাংবাদিকের ক্ষেত্রে না হয়।
শনিবার সকালের দিকে মাহমুদের মেয়ে আজ্জাহারা তার এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন- ‘বাবাকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ায় সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ…আজ বাবা বাড়ি ফিরেছেন।’
৯ সন্তানের জনক মাহমুদ হুসেইনের আরব ভাষাভিত্তিক সংবাদমাধ্যমে রিপোর্টিংয়ের কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আল জাজিরা অ্যারাবিক চ্যানেলে কয়েক বছর ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার পর ২০১০ পূর্ণ মেয়াদে নিয়োগ পান। প্রথমে কায়রোতে কাজ করলেও পরে তার কর্মস্থল হয় কাতারের দোহায়।
ভালোই চলছিল। কিন্তু সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় ২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর। ছুটির দিন পরিবার নিয়ে বের হলে গ্রেপ্তার করা হয় ৫৪ বছর বয়সী মাহমুদকে। কোনো আইনজীবীর উপস্থিতি ছাড়াই টানা ১৫ ঘণ্টার বেশি সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে।
এরপর ছেড়ে দেয়া হলেও কয়েক দিন পরই আবার গ্রেপ্তার করা হয় মাহমুদকে। মিসরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, মাহমুদ মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে এবং বৈদেশিক আর্থিক সহযোগিতায় রাষ্ট্রের কুৎসা রটায়।
কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ আনা বা মামলা করা হয়নি মাহমুদের বিরুদ্ধে। কথিত অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করে আসছিলেন তিনি ও আল জাজিরা।
এই সাংবাদিকের মুক্তিতে বিশ্বজুড়ে তৎপরতা চালায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি। এর মধ্যে এক ডজনেরও বেশি সময় মাহমুদের কারাগারে বাখার মেয়াদ বাড়ায় মিসর সরকার। এক্ষেত্রে বিচারবহির্ভূতভাবে কারাগারে রাখার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব বিধান লঙ্ঘন করা হয়।
জেলে থাকার সময় মাহমুদ শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থতায় ভুগেছেন। ২০১৭ সালে তার হাত ভেঙে গেলেও কারাগারে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হয় নাই।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে জাতিসংঘের সালিশি বিচারবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ মন্তব্য করে, মাহমুদকে এভাবে কারাবদ্ধ করে রাখাটা ‘নিষ্ঠুর ও অমানবিক’।
নানা শর্তে এই সাংবাদিককে মুক্তি দেয়ার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মাহমুদকে ২০১৯ সালে কায়রোর তোরা কারাগার থেকে নিয়ে যাওয়া হয় গিজার সেলে। চলাফেরার ওপর বিধিনিষেধ সাপেক্ষে মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছিল।
এসব প্রক্রিয়ার মধ্যেই হঠাৎ প্রসিকিউটরের অফিসে ডাকা হয় মাহমুদকে। আবার পাঠানো হয় জেলে। হতাশ হন তার মুক্তির অপেক্ষায় থাকা তার পরিবারের সদস্যরা।
শেষ মুহূর্তে কোনো কারণ ছাড়াই মাহমুদকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘুরিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। তার বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরুর ঘোষণা দেয় তারা।
পেরিয়ে গেছে চারটি বছর। কোনো অভিযোগ আনা যায়নি মাহমুদের বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত মুক্তি মিলল তার। মিসরীয় এই সাংবাদিকের মুক্তিতে উচ্ছ্বসিত তার পরিবার ও আল জাজিরা।
আল জাজিরার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক বলেন, কারাগারে থাকার সময়টায় বিশ্বজুড়ে মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি। তার মুক্তির দিন বিশ্বজুড়ে যেসব সাংবাদিককে অন্যায়ভাবে জেলে বন্দি করা হয়েছে, তাদের ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে আল জাজিরা।