সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার আহ্বানে শনিবার তিন ঘণ্টার ‘চাক্কা জ্যাম’ কর্মসূচির শেষে ভারতীয় কৃষক ইউনিয়নের নেতা রকেশ টিকাইত বলেছেন, ‘বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিল করতে সরকারকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এর পরে আমরা পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করব। আমরা সরকারের চাপের কাছে নতিস্বীকার করে আলোচনায় বসব না।’
শনিবার ভারত সরকারের নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী কৃষকেরা পাঞ্জাব ও হরিয়ানাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে রাস্তা অবরোধ করে।
‘জননিরাপত্তা বজায় রাখতে এবং জনসাধারণের জরুরি অবস্থা অব্যাহত রাখার স্বার্থে’ শনিবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত সিংঘু, গাজীপুর ও টিকরি এবং তার আশপাশের অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত রাখা হয়েছে। দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার পুলিশ, আধাসামরিক ও রিজার্ভ ফোর্সের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
দেশব্যাপী ‘চাক্কা জ্যাম’ কর্মসূচির কারণে দিল্লি পুলিশ রাজধানীর সমস্ত সীমান্তে সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করেছিল। গাজীপুর সীমান্তে পুলিশ মাল্টি-লেয়ার ব্যারিকেড তৈরি করেছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, কৃষকদের ‘চাক্কা জ্যাম’ ডাকের সমর্থনে জমায়েত করার অভিযোগে মধ্যদিল্লির শহীদ পার্কের কাছে প্রায় ৫০ জনকে আটক করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় হরিয়ানা পুলিশও নিশ্ছিদ্র সুরক্ষার ব্যবস্থা করে। সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও রাস্তায় নিরাপত্তা ও ট্র্যাফিকের ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয় এবং জেলা পুলিশ প্রধানদের তাদের পর্যাপ্ত কর্মী মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় দিল্লি মেট্রোর ১০টি স্টেশনে প্রবেশ ও প্রস্থানের দরজা।
কৃষকেরা দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্ত থেকে পালওয়াল পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে। অ্যাম্বুলেন্স এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলোর চলাচল বন্ধ করা হয়নি। পাঠানকোট-জম্মু হাইওয়েও বন্ধ হয়ে গেছে। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন (একতা উগ্রাহান) সাধারণ সম্পাদক সুখদেব সিং কোক্রিকালান জানিয়েছেন, তারা পাঞ্জাবের সাঙ্গরুর, বার্নালা ও ভাতিন্ডাসহ ১৫টি জেলার ৩৩টি স্থানে সড়ক অবরোধ করেন।
কংগ্রেস দেশব্যাপী অবরোধ সমর্থন করেছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক হিন্দি টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘অন্নদাতাদের শান্তিপূর্ণ সত্যাগ্রহ জাতীয় স্বার্থে। এই তিনটি আইন কেবল কৃষক-শ্রমিকদের জন্য নয়, জনগণ ও দেশের জন্যও ক্ষতিকারক। সম্পূর্ণ সমর্থন!’
দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া শনিবার বলেছেন, কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের তিনটি নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী কৃষকদের দাবি মেনে নেওয়া উচিত। তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি সরকার কৃষকদের স্বার্থ উপেক্ষা করে কিছু করপোরেটদের সুবিধার জন্য এই আইন নিয়ে এসেছে। দেশজুড়ে কৃষকদের বেদনা বোঝা যায়। আমি দেখেছি, গুজরাটের কৃষকেরাও দিল্লি গিয়েছিলেন তাদের বক্তব্য পেশ করার জন্য।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস শুক্রবার ভারতীয় সরকার ও আন্দোলনরত কৃষকদের সর্বাধিক সংযম রক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, সবার জন্য মানবাধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান সহকারে ‘ন্যায়সঙ্গত সমাধান’ সন্ধান করা অত্যন্ত জরুরি। মানবাধিকারের জন্য জাতিসংঘের হাই কমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) কার্যালয় একটি টুইট বার্তায় বলেছে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মত প্রকাশের অধিকারগুলো অফলাইন এবং অনলাইন উভয় ক্ষেত্রেই সুরক্ষিত করা উচিত।