আরও বেশি বাঁশ উৎপাদনে নজর দিচ্ছে পাকিস্তান। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক বাঁশ ও বেত সংস্থা আইএনবিএআর-এর পূর্ণাঙ্গ সদস্য হতে চায় দেশটি।
সংস্থাটিতে ভারতের আধিপত্যের রাশ টানার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে পাকিস্তানের দৈনিক দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ভারত এরই মধ্যে সংগঠনটির সদস্যপদ অর্জন করেছে। ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অন ব্যাম্বো অ্যান্ড র্যাটন (আইএনবিএআর) একটি আন্তঃসরকারি স্বাধীন সংস্থা। সংস্থাটির উদ্দেশ্য বিশ্বজুড়ে মানুষ ও পরিবেশের কল্যাণে বাঁশ ও বেত উৎপাদনের উন্নয়নে কাজ করা।
পাকিস্তান মনে করছে, ভারত সংস্থাটিতে বেশি ছড়ি ঘুরাচ্ছে এবং বেশি সুযোগসুবিধা ভোগ করছে। তাতে ভারসাম্য আনতেই এর সদস্য হতে উদ্যোগী হয়েছে ইসলামাবাদ।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও) বলছে, ১৯৯২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে বাঁশ চাষের জমির আওতা ৯ হাজার হেক্টর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার হেক্টরে।
আফগানিস্তান যুদ্ধের সময়টায় ২০০৫ সালের ভূমিকম্প ও ২০১০ সালের বন্যার পর পাকিস্তানে বাঁশ চাষ বেশি বেড়েছে।
২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বেইজিং সফরের সময় পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন ও জাতীয় বন মন্ত্রণালয় এবং চীনের তৃণভূমি বিষয়ক প্রশাসনের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উদ্দেশ্য, দুই দেশের বনজ, বন্যজীবন ও জীববৈচিত্র্যের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
ওই সমঝোতা চুক্তির ৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, এ ব্যাপারে গঠিত দুই দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের মধ্যে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ প্রথম বৈঠক হয়।
গৃহীত নানা পদক্ষেপের মধ্যে যেটি বাস্তবায়নে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে সেটি হলো- পাকিস্তানকে আইএনবিএআরের পূর্ণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করতে চেষ্টা করা।
পরিবেশগতভাবে বাঁশ ও বেতের টেকসই ব্যবহারের উন্নয়নে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আইএনবিএআর। এর সদস্যসংখ্যা ৪৭। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান ছাড়া সার্কভুক্ত বাকি দেশগুলো আগেই এই সংস্থার পূর্ণাঙ্গ সদস্য হয়েছে।
ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের পর থেকে বাঁশে বেশি মনোযোগী হয়েছে পাকিস্তান। কীভাবে আন্তর্জাতিক বাঁশ সংস্থার পূর্ণাঙ্গ সদস্য হওয়া যায়, সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে পরামর্শ চেয়েছে দেশটির সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইএনবিএআরের সদস্যপদ পেতে চীনের সহযোগিতা চেয়েছে বেইজিংয়ে পাকিস্তান দূতাবাস।
সংস্থাটির পূর্ণাঙ্গ সদস্য হতে পারলে পাকিস্তান বাঁশজাতীয় পণ্যের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংস্থাটিকে কাজে লাগিয়ে পণ্যগুলো মেলে ধরতে পারবে।
বাঁশ চাষের প্রসার ঘটিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমিধস, বন্যা ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগও মোকাবিলা করা যেতে পারে।
সদস্য হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্ব বাঁশ সংস্থার রসদ নিজেদের গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও কাজে লাগাতে পারে পাকিস্তান। সংস্থাটির সদস্যপদ অর্জন করতে সমর্থন রয়েছে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়েরও।
আইএনবিএআরের পূর্ণাঙ্গ সদস্য হতে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগ। সংগঠনটির সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী, প্রতি বছর ৮ হাজার ডলার ফি দিতে হয়। আবেদনটি বিবেচনায় নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ।