আরও বেশি কৃষককে দিল্লি যাওয়ার ডাক দিয়েছেন ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকাইত। একই সঙ্গে সমাজের অন্যান্য অংশের মানুষকেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কৃষকদের সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার হরিয়ানার জিন্দ-এ প্রায় ৫০ হাজার কৃষকের মহাপঞ্চায়েতে তিনি এই আহ্বান জানান।
এদিন মহাপঞ্চায়েতের জন্য বিশাল সমাবেশের মঞ্চটি হঠাৎ ধসে পড়ে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকাইত এবং অন্যান্য কৃষক নেতাদের অক্ষত অবস্থাতেই উদ্ধার করা হয়। কোনো আঘাতের খবর পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে মঙ্গলবারের মতই সংসদের উচ্চসদন রাজ্যসভার অধিবেশন শুরু হতেই কৃষি আইন নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে। আইন নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন আম আদমি পার্টি (আপ) এর তিন সাংসদ। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ভেঙ্কাইয়া নাইডু এ ব্যাপারে ওই তিন সাংসদ সঞ্জয় সিংহ, এনডি গুপ্ত এবং সুশীল গুপ্তকে সতর্ক করেন। কিন্তু ওই সতর্কবার্তা গ্রাহ্য না করায় তিন সাংসদকেই পুরো দিনের জন্য সাসপেন্ড করেন চেয়ারম্যান।
বুধবার রাজ্যসভায় সংসদের যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির দেওয়া ভাষণের উপর ধন্যবাদ জ্ঞাপক প্রস্তাবের উপর বিতর্কে অংশ নেন বিরোধী দলীয় নেতা ও কংগ্রেস নেতা গোলাম নবী আজাদ। বুধবার সরকারকে তিনটি বিতর্কিত কৃষি বিলকে সম্মান না করে প্রত্যাহার করতে বলেন তিনি।
নতুন আইনের ফলে কৃষকরা যে সমস্যার মুখোমুখি হবেন তা তুলে ধরে আজাদ বলেন, ‘সরকারের উচিত আইনটি বাতিল করা, বিষয়টিকে ‘মর্যাদার বিষয়’ হিসেবে দেখা উচিত নয়।’
কৃষকদের ‘অন্নদাতা’ হিসেবে বর্ণনা করে আজাদ বলেন, ‘নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কৃষকদের মুখোমুখি হওয়ার কোনও অর্থ নেই। এর বদলে সরকারের উচিত অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোনিবেশ করা।’
আজাদ আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে যা হয়েছে তা অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক। আইনশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। আমরা ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি, এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির আবেদন জানাচ্ছি।’
এদিন রাজ্যসভায় বিজু জনতা দলের সাংসদ প্রসন্ন আচার্য কৃষি আইন নিয়ে আক্রমণ করেন সরকারকে।
তিনি বলেন, ‘ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে সরকার যদি মৌখিক আশ্বাস দিতে পারে তাহলে কেন দুটো লাইন আইনের নথিতে লিখে দিচ্ছে না?’
এসময় তিনি সরকারকে স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে বলেন। জানান, ‘কেন্দ্র ২০১৪ সালে বলেছিল ২০২০ সালের মধ্যে কৃষকদের রোজগার দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তখন কৃষকদের রোজগার কত ছিল এবং এখন কত রয়েছে? দ্বিগুণ কী হয়েছে, যদি নাহয় তাহলে কেন হয়নি? এটা কি সরকারের ব্যর্থতা নয়?’
বুধবার রাজ্যসভা অধিবেশনের শুরু হতেই কৃষি আইনের বিষয়টি উত্থাপন করে বিরোধীরা। কৃষক আন্দোলন নিয়ে অচলাবস্থা কাটাতে পাঁচ ঘণ্টার আলোচনা দাবি করে ১৬টি বিরোধী দল। সরকার তাতে সম্মতিও দেয়। জানায় পাঁচ ঘণ্টা নয়, বিষয়টি নিয়ে ১৫ ঘণ্টা আলোচনা করতে রাজি তারা। বিরোধী দলগুলিও রাজি হয় এতে।
এ প্রসঙ্গে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘সরকার আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। আমরাও রাজি আছি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবের আগে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা না হয় তা হলে সরকারের কাছে আর্জি জানাব যেন আলোচনার সময় আরও বাড়ানো হয়।’
এরপরই রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন যে কৃষকদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবের পর।
মঙ্গলবার সম্মিলিত কিষাণ মোর্চা বলেছে যে দিল্লি পুলিশ সীমান্তে ব্যারিকেডিংয়ের একাধিক স্তর সরিয়ে না দিলে এবং ইন্টারনেট সেবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত সরকারের সাথে কোনো ‘আনুষ্ঠানিক’ আলোচনা হতে পারে না।
কৃষক নেতা রাকেশ টিকাইত বলেন, ‘পুলিশ ব্যারিকেডিং কৃষকদের থামাতে পারেনি এবং তারা অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।’