যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) গণতন্ত্র সূচকে এক বছরে চার ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।
সূচকে ২০২০ সালে বাংলাদেশ ৫.৯৯ স্কোর অর্জন করে ৭৬তম অবস্থানে রয়েছে। আঞ্চলিকভাবে দেশের অবস্থান ১৬তম।
আগের বছর ২০১৯ সালে ৫.৮৮ স্কোর নিয়ে ৮০তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। এর আগের বছর ৫ দশমিক ৫৭ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ছিল তালিকার ৮৮তম অবস্থানে।
‘ডেমোক্রেসি ইনডেক্স ২০২০: ইন সিকনেস অ্যান্ড ইন হেলথ?’ শিরোনামে বুধবার গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ইআইইউ।
সূচকে নির্বাচনি প্রক্রিয়া ও বহুত্ববাদে বাংলাদেশ পেয়েছে ৭.৪২ পয়েন্ট। এ ছাড়া সরকারের কার্যকারিতায় ৬.০৭, রাজনৈতিক অংশগ্রহণে ৬.১১, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ৫.৬৩ ও নাগরিক স্বাধীনতায় স্কোর ৪.৭১।
গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি হলেও ইআইইউ-এর বিবেচনায় দেশটি এখনও মিশ্র শাসনের (হাইব্রিড রেজিম) ক্যাটাগরিতে রয়েছে।
নির্বাচনি ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, সরকারের কার্যকারিতা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক স্বাধীনতার পরিবেশ বিবেচনা করে ১০ পয়েন্টের ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির সূচক তৈরি করে ইআইইউ।
কোনো দেশের গড় স্কোর আট এর বেশি হলে সেখানে ‘পূর্ণ গণতন্ত্র’; স্কোর ছয় থেকে আট এর মধ্যে হলে ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’; চার থেকে ছয় এর মধ্যে হলে ‘মিশ্র শাসন’ এবং পয়েন্ট চার এর নিচে হলে ‘স্বৈরশাসন’ চলছে বলে ধরা হয়।
ইআইইউর করা তালিকায় এবার ১৬৭ দেশের মধ্যে পূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে ২৩টি দেশে, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে ৫২টি দেশে, মিশ্র শাসন ৩৫টি ও স্বৈরশাসন রয়েছে ৫৭টি দেশে।
বাংলাদেশের প্রতিবেশ দেশ ভারত সূচকে ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’ ক্যাটাগরিতে থাকলেও স্কোর আগের চেয়ে কমেছে। ২০২০ সালে গণতন্ত্র সূচকে দেশটি ৬.৬১ স্কোর পেয়ে আছে ৫৩তম অবস্থানে। ২০১৯ সালে ৬.৯ স্কোর নিয়ে ৫১তম অবস্থানে ছিল দেশটি।
‘মিশ্র শাসন’ ক্যাটাগরিতে থাকা পাকিস্তান ৪.৩১ স্কোর নিয়ে আছে তালিকার ১০৫ নম্বরে। ৪.৪৮ স্কোর নিয়ে ১০৪তম অবস্থানে তুরস্ক।
ইআইইউর গণতন্ত্র সূচকে শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৬৮তম। এই দেশটিও আছে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের ক্যাটাগরিতে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটান ৫.৭১ পয়েন্ট পেয়ে ৮৪তম অবস্থানে এবং নেপাল ৫.২২ স্কোর নিয়ে আছে ৯২তম অবস্থানে। এই দেশগুলোর অবস্থান মিশ্রশাসন ক্যাটাগরিতে।
সূচকে স্বৈরশাসন ক্যাটাগরিতে মিয়ানমারের অবস্থান ১৩৫তম, আর আফগানিস্তান আছে ১৩৯তম অবস্থানে।
ইআইইউর গণতন্ত্র সূচকে মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশ আছে স্বৈরশাসন ক্যাটাগরিতে।
মধ্যপ্রাচ্যের সম্মৃদ্ধ দেশ কাতার ৩.২৪ স্কোর নিয়ে অতীতের মতোই স্বৈরশাসন ক্যাটাগরিতে জায়গা পেয়েছে। গণতন্ত্র সূচকে ১৬৭ দেশের মধ্যে কাতারের অবস্থান ১২৬তম। দেশটির সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা অন্যান্য দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়মিত সংবাদ প্রচার করে থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের একটি প্রতিবেদন ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ইআইইউর গণতন্ত্র সূচকে মধ্যাপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবের অবস্থানও তলানির দিকে। মাত্র ২.০৮ স্কোর নিয়ে সৌদি আরবের অবস্থান ১৫৬তম।
সৌদি আরব ছাড়াও স্বৈরশাসন ক্যাটাগরিতে আছে ফিলিস্তিন (১১৩তম), রাশিয়া (১২৪তম), কিউবা (১৪০তম), চিনসহ (১৫১তম) ৫৭ দেশের নাম।
২০১৪ সালের পর এই প্রথম পূর্ণ গণতন্ত্র ফেরত এসেছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায়। তাইওয়ান প্রথমবারের মতো ইআইইউর গণতন্ত্র সূচকে পূর্ণ গণতন্ত্রের মর্যাদা পেয়েছে। আফ্রিকান দেশ উগান্ডায় চলছে মিশ্রশাসন, সূচকে দেশটির অবস্থান ৯৮তম।
২০২০ সালে ৯.৮১ স্কোর নিয়ে ইআইইউর গণতন্ত্র সূচকে শীর্ষ অবস্থানে আছে নরওয়ে। এর পরের চারটি দেশ হলো আইসল্যান্ড, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড ও কানাডা।