ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস ও কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির সঙ্গে সমদূরত্বের নীতি ঘোষণা করেছে সিপিএমসহ একাধিক বামপন্থি দল। তারা জোট করেছে কংগ্রেসের সঙ্গে।
তবে সমদূরত্বের এ নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বামদের মধ্যেই।
২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ৩৫ বছর পশ্চিমবঙ্গ শাসন করার পর রাজ্য রাজনীতিতে বামদের শক্তি এখন অস্তমিত। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৪২টির মধ্যে মাত্র একটি কেন্দ্রে জামানত বাঁচাতে পেরেছিল তারা।
বিধানসভা নির্বাচনে এবার তুলনামূলকভাবে তাদের চেয়ে শক্তিশালী কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন বাম নেতারা।
জোটের প্রধান শরিক সিপিএমের হুংকার, তৃণমূল ও বিজেপিকে হারাতেই এ জোট।
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, সাম্প্রদায়িক বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। তৃণমূলের উত্থানও বিজেপির হাত ধরেই। তাদের ফের ভাব হতেও পারে। এ বিষয়ে কোনো গ্যারান্টি নেই।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ির সময়ে তার মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির সঙ্গে অতীতেও জোট করেছিল তৃণমূল। তাই এ নিয়ে বাম ঘরানায় অবিশ্বাস কাজ করছে।
ভারতের রাজনীতিতে সিপিএমের উত্থান কংগ্রেস বিরোধিতার কারণে। এখন সে কংগ্রেসই বামদের বন্ধু।
এ বিষয়ে সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘শত্রুর শত্রু আমাদের বন্ধু। রাজনীতিতে চিরস্থায়ী শত্রু বলে কিছু নেই।’
বাম রাজনীতিতে বিতর্ক দেখা দিয়েছে প্রধান রাজনৈতিক শত্রু চিহ্নিত করা নিয়ে। ভারতে এখনও বামপন্থি আন্দোলনের প্রধান শক্তি সিপিএম। তারা বিজেপি-তৃণমূল উভয়কে সমান শত্রু মনে করছে।
তবে এ নীতি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। নকশাল নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিজেপিই আমাদের প্রধান শত্রু। আগে বিজেপিকে হারাতে হবে। পরে তৃণমূলকে দেখে নেয়া যাবে। বিজেপিকে হারাতে না পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।’
বামপন্থি বুদ্ধিজীবী ও অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য একই মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে আগে বিজেপিকে হারাতে হবে। নইলে বাঙালির অস্তিত্বই বিপন্ন হবে।’
তপোধীর বলেন, ‘বিজেপি আসলে ঘৃণ্য পিশাচের দল। মানবতার শত্রু। এদের পরাস্ত করাই এখন একমাত্র কর্মসূচি হওয়া উচিত। নইলে আগামী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।’
বামপন্থি অভিনেতা কৌশিক সেন বলেন, ‘আমি তৃণমূলের ঘোরতর বিরোধী। কিন্তু এখন আমার কাছে সবচেয়ে বড় শত্রু বিজেপি। আমি বা আমরা আক্রান্ত। আমাদের মৌলিক অধিকারও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মোড়কে কেড়ে নেয়া হচ্ছে।’
তবে সিপিএমের রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতারা বিজেপিকে একমাত্র শত্রু হিসেবে মানতে নারাজ। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জানান, সমদূরত্বের নীতিতেই তারা অটল।
সিপিএম নেতা মো. সেলিম বলেন, ‘তৃণমূলকে বিশ্বাস করা যায় না। ফের বিজেপির হাত ধরতেই পারেন মমতা।’
তৃণমূলের আমলে বামপন্থিদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার ও দুর্নীতির বিষয় সামনে নিয়ে আসেন সেলিম।
একই অবস্থান কংগ্রেসেরও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘তৃণমূল আর বিজেপি হচ্ছে একই মুদ্রার দুই পিঠ। কোনো গ্যারান্টি নেই। ফের বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে পারে তৃণমূল।’
কংগ্রেস ও বামপন্থিরা তাই জোট করেই নির্বাচনে দাঁড়াবেন। তাদের লক্ষ্য জোট সরকার। নেতারা এ বিষয়ে আশাবাদী।