পুতিনবিরোধী নেতা অ্যালেক্সাই নাভালনির মুক্তির দাবিতে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে রাশিয়া।
মস্কোয় এক বিক্ষোভ থেকে নাভালনির স্ত্রী জুলিয়া নাভালনায়াকেও আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তার সমর্থকরা। আন্দোলন দমাতে গণগ্রেপ্তারের পথ বেছে নিয়েছে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার।
রোববার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
এ দিন তীব্র শীত উপেক্ষা করে রাজধানী মস্কোসহ সারা দেশে নাভালনির মুক্তির দাবিতে কয়েক হাজার মানুষ সড়কে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। বিবিসি জানিয়েছে, জেলখানাগুলোতে নতুন আটকদের রাখার জায়গা পাচ্ছে না পুলিশ।
প্রথম বিক্ষোভটি অনুষ্ঠিত হয় বন্দর নগরী ভ্লাদিভস্তকে। সেখানে বিক্ষোভকারীরা শহরের প্রধান কেন্দ্রে জমায়েত হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজ থেকে দেখা যায়, কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী পুলিশের ঠাণ্ডা পানির কামান এড়িয়ে এক সঙ্গে গোল হয়ে নাচছে। সেখান থেকে প্রায় ১০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
গ্রেপ্তারের ভয় উপেক্ষা করে মানুষ রাস্তায় নেমেছে মস্কোতেও। সেখানে নামপ্রকাশে ৪০ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি আমরা পুরোপুরি আইনহীন একটি দেশে বাস করি। এই দেশের সবকিছু চলে দুর্নীতি দিয়ে। আমি ভিন্নভাবে বাঁচতে চাই।’
আন্দ্রেই নামে ২৫ বছর বয়সী আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘স্বাধীনভাবে বাঁচার ইচ্ছা আটক হওয়ার ভয় থেকেও শক্তিশালী।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় পুতিনকে চোর বলে শ্লোগান দিচ্ছে তরুণ বিক্ষোভকারীরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী মস্কোর সাতটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে রাস্তায় পথচারীদের চলাচলও সীমিত করা হয়েছে।
প্রতারণা ও অর্থপাচার মামলার স্থগিত রায়ের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে মঙ্গলবার নাভালনির বিচার শুরুর কথা রয়েছে। একই সঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিক্ষোভে উসকানি দেয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
রাশিয়ার প্রধান বিরোধী দল রাশিয়া অফ দ্য ফিউচারের নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি। গত বছরের আগস্টে তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ ওঠে।
নির্বাচনি প্রচার শেষে অভ্যন্তরীণ একটি ফ্লাইটে সাইবেরিয়ার টমস্ক থেকে মস্কো ফিরছিলেন নাভালনি। মাঝ আকাশে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ওমস্ক শহরে বিমানের জরুরি অবতরণ করিয়ে শুরু হয় চিকিৎসা। কোমায় চলে যাওয়া নাভালনিকে রাখা হয় আইসিইউতে।
তবে সেখানে সঠিক চিকিৎসা পাবেননা এমন আশংকায় আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপে জার্মানিতে চিকিৎসা নেন নাভালনি। কয়েকটি মামলা থাকায় ক্রেমলিনের অনুমতি নিয়ে বার্লিনে চিকিৎসা নিয়ে সম্প্রতি সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। মস্কোর একটি বিমানবন্দরে নামার পরই নাভালনিকে আটক করে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার।
জার্মান চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, নাভালনির ওপরে নভিচক নামে স্নায়ু বিকল করার বিষাক্ত এক রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছিল। এ ঘটনায় পুতিন সরকার জড়িত বলে দাবি করে আসছে নাভালনির দল ও পরিবার।