ভারতের ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানী দিল্লিতে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন শহরের কাছে কয়েক মাস ধরে অবস্থান করা হাজার হাজার কৃষক।
মঙ্গলবার সকাল থেকে লালকেল্লাসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে দফায় দফায় কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। তাদের লাঠিচার্জও করা হয়। এ সময় মৃত্যু হয় এক কৃষকের।
আন্দোলনকারীরা এ মুহূর্তে লালকেল্লার সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুপুরের দিকে ২০টির বেশি ট্রাক্টর নিয়ে লালকেল্লার বাইরে রামলীলা ময়দানে প্রবেশ করে আন্দোলনরত কৃষকেরা। এ সময় জাতীয় পতাকা ও শিখদের পবিত্র পতাকা হাতে আন্দোলনকারীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়।
আন্দোলনকারীদের কয়েক জন লালকেল্লা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন খুঁটিতে থাকা পতাকা সরিয়ে ওইসব পতাকা লাগায়।
এনডিটিভির সর্বশেষ খবরে জানা যায়, আন্দোলনকারীদের সরাতে লালকেল্লায় লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসও ছোড়ে তারা। একপর্যায়ে কৃষকেরা সেখান থেকে সরলেও লালকেল্লার সামনের রাস্তায় অবস্থান করছে।
লাঠিচার্জে কতজন আহত হয়েছেন, তা জানা যায়নি। তবে তিন থেকে চারটি অ্যাম্বুলেন্স লালকেল্লায় ঢুকতে দেখা যায়।
দ্য হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার দুপুরে দিল্লির কেন্দ্রস্থল মিন্টো রোডে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। ট্রাক্টরের নিচে তার মরদেহ পিষ্ট অবস্থায় পাওয়া যায়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন।
ইন্টারনেট সেবা বন্ধ
দিল্লির পাঁচটি বিক্ষোভস্থল সিনঘু, গাজীপুর, টিকরি, মুকারবা চক ও নাংলই সংলগ্ন এলাকায় ১২ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সকালে দিল্লির সিনঘু, টিকরি ও গাজীপুর সীমান্তে পুলিশের সঙ্গে কৃষকদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয় সীমান্তের ব্যারিকেড ভেঙে দিল্লির কেন্দ্রস্থল ইন্ডিয়া গেটের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে যায় কৃষকদের মিছিল।
বিভিন্ন জায়গায় কাঁদানে গ্যাস, লাঠিচার্জ করে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় পুলিশ। সময়ের অনেক আগে বাধা টপকে এগিয়ে যায় কৃষকরা। কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল কার্যত পরিণত হয় ‘দিল্লি অভিযানে’।
দিল্লির গাজীপুর সীমান্তে আন্দোলনকারীদের সরাতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে পুলিশ। ছবি: ইন্ডিয়া টুডে
পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি
উত্তর প্রদেশ-দিল্লির গাজীপুর সীমান্তে ব্যারিকেডের সামনে আসার পরই পুলিশের ঘোড়সওয়ার বাহিনীর সঙ্গে কৃষকদের সামান্য ধস্তাধস্তি হয়। তারপরই ভেঙে পড়ে ব্যারিকেড।
উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয় পুলিশকে। তবে মিছিলের গতি রোধ করা যায়নি।
সঞ্জয় গান্ধী ট্রান্সপোর্ট নগরে পুলিশের কয়েক জন সদস্য আহত হন বলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়।
দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, উত্তর প্রদেশ পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তারা। কোথা থেকে, কীভাবে মিছিল আসছে, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
কিন্তু কতক্ষণ এ ভিড় সামলানো যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে আন্দোলনরত কৃষকেরা দিল্লি ঢোকার চেষ্টা করলে বাঁধে বিপত্তি। তাদের আটকাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও লাঠি চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ।
দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, টিকরি সীমান্তে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া যায়।
এর আগে ৩৭টি শর্ত আরোপ করে আন্দোলনরত কৃষকদের ট্রাক্টর র্যালি করার অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ।
শর্তের মধ্যে ছিল ঘোষিত রুট দিয়ে দিল্লি ঢুকতে হবে এবং প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান শেষে র্যালি বের করা যাবে। আর দিল্লির কেন্দ্রস্থলে কোনো জমায়েত করা যাবে না। সেই শর্ত মেনে গতকাল রাত আর মঙ্গলবার সকাল থেকে ট্রাক্টর ঢুকতে শুরু করে দিল্লিতে।
কিছু কিছু জায়গায় পথ আটকাতে পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করলে সে ব্যারিকেড ভাঙতে শুরু করেন কৃষকেরা। মুকারবা চকে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
অন্যদিকে সিনঘু সীমান্ত দিয়ে দিল্লিতে প্রবেশ করা কৃষকরা সঞ্জয় গান্ধী ট্রান্সপোর্ট কলোনিতে জমায়েত হলে তাদের সরাতে টিয়ার গ্যাস আর জলকামান ব্যবহার করা হয়।