কৃষক নেতাদের খুনের ছক কষা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তের বিক্ষোভকারীরা।
তাদের অভিযোগ, হরিয়ানার পুলিশ কর্মকর্তা এই ছক কষছেন। যদিও বিক্ষোভকারী কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
শুক্রবার রাতে সিংঘু সীমান্তে হঠাৎ সংবাদ সম্মেলনে করেন কৃষকরা। সেখানে মাস্কে মুখ ঢাকা এক যুবককে হাজির করেন তারা। অভিযোগ করেন, চার কৃষক নেতাকে খুন করতে দুটি দলকে নিয়োগ করা হয়েছে। আর ওই দলেরই এক সদস্যকে শনাক্ত করেছেন তারা।
২৬ জানুয়ারির কৃষক প্যারেড ভেস্তে দেওয়ার উদ্দেশেই এই ছক কষা হয়েছে বলে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ।
সিংঘু সীমানায় প্রকাশ্যেই ওই অভিযুক্ত বলেন, ‘কৃষক নেতাদের উপর হামলা করতে তাদের নিয়োগ করা হয়েছে। এ ধরনের দুটি দল রয়েছে। একদল মিশে রয়েছে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। তাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে। অন্য দলের সদস্যরা পুলিশের কর্মকর্তা সেজে কাজ সারতে চাইছে।’
অভিযুক্ত যুবক আরও জানান, প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন র্যালির মধ্যে থেকে গুলি চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এমনকি, চার কৃষক নেতার ছবিও দেয়া হয়েছে আততায়ীদের। তাদের খুন করতে ‘সুপারি’ও দেয়া হয়েছে।
কৃষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এই পরিকল্পনার মাথা হরিয়ানার সোনেপতের রাই পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা বিবেক মালিক। যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। মিথ্যে অভিযোগ দাবি করে প্রশ্ন তুলেছেন, পুলিশ কেন এরকম করবে?
শুক্রবার কৃষক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ ও কেন্দ্রীয় সরকারের ১১তম বৈঠক ব্যর্থ হবার পর দুপক্ষই একে ওপরের বিরুদ্ধে কঠোর মন্তব্য করেছে। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমরের দাবি, সরকার তাদের পক্ষে ‘সর্বোচ্চ প্রস্তাব’ দিয়েছিল। কিন্তু কৃষক নেতারা তা না মানায় আন্দোলনকারীদের কোর্টেই এখন বল রয়েছে । বলেছেন, ‘আমরা আরও এক দফার বৈঠকে যেতে পারি যদি কৃষক সংগঠনগুলি আইন প্রত্যাহার করা ছাড়া নতুন প্রস্তাব দেয়।’
কৃষকদের ‘মঙ্গলের জন্য’ কেন্দ্রের এই প্রস্তাব না মানায় দুঃখ গোপন করেননি কৃষিমন্ত্রী। তার অভিযোগ, সংগঠনের নেতারা কৃষকদের ভালোর জন্য আন্তরিকতা দেখাচ্ছেন না। তোমর বলেছেন, ‘আলোচনা এখনও অমীমাংসিত। কারণ কৃষকদের ভালোর জন্য ইউনিয়ন আন্তরিক নয়। এর জন্য আমি খুবই দুঃখিত। দেশ এবং কৃষকদের স্বার্থে আমাদের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার জন্য বলেছিলাম।’
তোমর কৃষকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘বল এখন আপনাদের কোর্টে।’
সর্বভারতীয় কৃষকসভার নেতা হান্নান মোল্লা বলেছেন, ‘বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্তও নেয়া যায়নি। আইন সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি থেকে আমরা সরছি না।’
ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের সদস্য হর্ষ গিলের বক্তব্য, ‘কৃষকদের মনোযোগ আপাতত প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজপথে ট্রাক্টর র্যালিতে। এই কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য শয়ে শয়ে কৃষক দিল্লি সীমানায় এসে পৌঁছাচ্ছে। এই অবস্থায় আন্দোলন শিথিল করার অর্থ কার্যত হার স্বীকার করে নেয়া। আইন প্রত্যাহারের লিখিত প্রতিশ্রুতি ছাড়া আন্দোলন বন্ধ হবে না বলে দাবি তার। শীত বিক্ষোভকারীদের কাছে বাধা নয়।’
হর্ষ গিল-এর বক্তব্যের প্রতিধ্বনি শোনা গেছে সিংঘু, টিকরি, চিল্লা সীমান্তে অবস্থানরত কৃষকদের কাছেও। দমতে রাজি নয় দিল্লি সীমানায় অবস্থানরত কৃষকরা। উল্টো প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজপথে ট্রাক্টর র্যালির মধ্যে দিয়েই শক্তি প্রদর্শনে মরিয়া তারা।
বিক্ষোভকারীদের মতে, কেন্দ্রের প্রস্তাবে রাজি হলে আন্দোলন ‘নিরর্থক’ হয়ে পড়বে। ট্রাক্টর ব়্যালি ঘিরে প্রশাসনের উপর যে চাপ তৈরি হয়েছে তাও কার্যত অচল হয়ে যাবে। যার সুযোগ নিতে পারে নরেন্দ্র মোদির সরকার।
সিংঘু সীমানায় অবস্থান বিক্ষোভে বসা হরিয়ানার আম্বালার কৃষক ৭৩ বছরের জগমোহন সিং বলেছেন, ‘আইন স্থগিতের কেন্দ্রীয় প্রস্তাব নৈতিকভাবে আমাদের জয়। কিন্তু, কৃষি আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনও মতেই এখান থেকে উঠব না।’
জগমোহনের ছেলে, নাতিরাও এই আন্দোলনে দিল্লি সীমানায় বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। একই দাবি, পাঞ্জাবের হোসিয়ারপুরের দেবা সংঘর্ষপুর কমিটির নেতা বছর ৩৮-এর হরমিন্দর সিংয়ের। এতদূর এগিয়ে গিয়ে পিছিয়ে আসার কোনও অর্থ হয়না বলে দাবি তার। উত্তরপ্রদেশ-দিল্লি সীমান্তের গাজিপুরে অবস্থানরত রামপুরের কৃষক হাসিব আহমেদ বলেছেন, ‘কেন্দ্র মনে করছে চাপ দিলেই আমরা উঠে যাব। কিন্তু ঠিক তার উল্টো হবে। আমরা এখন ২৬ জানুয়ারি দিল্লিতে ট্রাক্টর র্যালির জন্য মরিয়া।’