ভয়াবহ এক ব্ল্যাকআউটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। চব্বিশ ঘণ্টা হতে চলল, বিদ্যুৎ বিপর্যয় থেকে এখনও বের হয়ে আসতে পারেনি দেশটি। অন্ধকারে স্থবির হয়ে পড়ছে জনজীবন।
শনিবার মাঝ রাতের আগে এই ব্ল্যাকআউট হয়। অন্ধকারে ছেয়ে যায় করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ, মুলতানের মতো বড় বড় শহর। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিকের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে পাকিস্তানের ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থাও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নিয়মিত সংবাদ আপডেট দিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির গণমাধ্যমগুলো।
টানা বিদ্যুৎহীনতায় ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা ‘ভেঙে পড়েছে’ বলে জানিয়েছে দেশটির ইন্টারনেট সংযোগ তদারকি প্রতিষ্ঠান নেটব্লকস।
ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের বিদ্যুৎমন্ত্রী ওমর আইয়ুব খান জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিশেষজ্ঞরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরেছে। সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্য পাঞ্জাবের বেশির ভাগ এলাকাতেই বিদ্যুৎ ফিরেছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক কেন্দ্র করাচিতেও ফিরেছে বিদ্যুৎ।
পুরো দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে সে ব্যাপারে এখনও জানা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেছেন, ‘পারমাণবিক ও তাপ বিদ্যুতের প্ল্যান্টগুলোর কার্যক্রম শুরু করতে আরও কিছু সময় লেগে যেতে পারে।’
ভয়াবহ এই ব্ল্যাকআউট নিয়ে টুইটার, ফেসবুট ও হোয়াইটসঅ্যাপে নানা ধরনের মেমে পোস্ট এবং কৌতুক করছে নেটিজেনরা। বেশির ভাগ রসিকতাই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার সরকারকে নিয়ে।
টুইটারে একজন লিখেছেন, ‘এ কেমন নতুন বছরের শুরু… আসুন আমরা মহান আল্লাহর করুণা প্রার্থনা করি।’
হোয়াইটসঅ্যাপের ম্যাসেজে একজন লিখেছেন- ‘পাকিস্তান নাইটমুডে ঘুমাচ্ছে।’
তবে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মধ্যেও হাসপাতালগুলো থেকে কোনো ধরনের গোলোযোগের খবর আসেনি। জেনারেটর ব্যাক-আপ থাকায় চালু রাখা যাচ্ছে জরুরি সেবা।
তিন বছরের কম সময়ের মধ্যে এটা পাকিস্তানের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় দ্বিতীয় ভয়াবহ ব্লাকআউট। ২০১৮ সালের মে মাসে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে নয় ঘণ্টার বেশি অন্ধকারের মধ্যে ছিল দেশটির বেশ কিছু এলাকা।
এর আগে ২০১৫ সালে বড় ধরনের ব্লাকআউটের কবলে পড়েছিল পাকিস্তান। ওই সময়ে গোটা দেশের ৮০ শতাংশ এলাকা অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছিল।
এবারের ব্ল্যাকআউটের সূত্রপাত সিন্ধু প্রদেশের গুদ্দু পাওয়ার প্ল্যান্টে। তবে এর কারণ জানা যায়নি।
বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান, সেখানে বিপর্যয়ের পর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের মাত্রা ৫০ থেকে শূন্যতে নেমে আসে।
পাকিস্তানে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের ঘটনা অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। তবে এবারের ব্ল্যাকআউটকে পাকিস্তানের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কেননা এর আগে রাজধানী ইসলামাবাদ, বন্দরনগরী করাচিসহ বড় শহরগুলো একসঙ্গে অন্ধকারে ছেয়ে যাওয়া খুব বেশি দেখা যায়নি।