বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

একদিকে আত্মহত্যা, অন্যদিকে কুৎসা প্রচার

  •    
  • ১০ জানুয়ারি, ২০২১ ১৯:০১

চলতি কৃষক আন্দোলনকে হেয় প্রতিপন্ন করতে শাসক দলের নেতা, কর্মী, সমর্থকদের চেষ্টার কোনো শেষ নেই। কখনও ‘‌খলিস্তানি’‌, কখনও ‘‌সন্ত্রাসবাদী–মাওবাদী’‌ তকমা দিয়ে কৃষক আন্দোলনকে নানাভাবে দমানোর চেষ্টা হয়েছে।

দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে দিল্লি সীমান্তে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন কৃষকেরা। দাবি, নতুন তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে সরকারকে। এই নিয়ে মোদি সরকারের সঙ্গে আট দফা আলোচনা ভেস্তে গেছে।

এসবের জেরেই হতাশ হয়ে শনিবার সিংঘু সীমান্তে আত্মহত্যা করলেন আরও এক কৃষক। বিষ খেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি আন্দোলনকে হেয় প্রতিপন্য করার শাসকদলীয় অপচেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।

শনিবার আত্মঘাতী হয়েছেন কৃষক অমরিন্দর সিং। ৪০ বছর বয়স্ক অমরিন্দর পাঞ্জাবের ফতেগড় সাহিবের বাসিন্দা। জানা গেছে, ওই কৃষক অন্য আন্দোলনকারীদের বলেছিলেন, সরকারের ওপর আস্থা হারিয়েছেন তিনি। সরকার আইন প্রত্যাহার করতে চাইছে না বলে তিনি হতাশ। তার আত্মহত্যা আন্দোলনকারীদের অনেকটাই সাফল্যের দিকে এগিয়ে দেবে বলে বিশ্বাস ছিল অমরিন্দরের।

অমরিন্দর বিষ খাওয়ার পর তাকে সোনিপতের এফআইএমএস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মারা যান তিনি। সরকারি হাসপাতালে তার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তার পরিবারের খোঁজ না মিললে রোববার ময়নাতদন্তের পর দেহ অন্য আন্দোলনকারী কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

জানুয়ারিতে দিল্লি–গাজিয়াবাদ সীমান্তে আত্মহত্যা করেছেন আরও এক কৃষক। তিনি উত্তরপ্রদেশের কাশ্মীর সিং লাদি। তার বয়স ৭৫। এখন পর্যন্ত চরম ঠান্ডায় এবং আত্মহত্যায় দিল্লি সীমান্তে মারা গেছেন অন্তত ৪৫ জন কৃষক।

অন্যদিকে, চলতি কৃষক আন্দোলনকে হেয় প্রতিপন্য করতে শাসক দলের নেতা, কর্মী, সমর্থকদের চেষ্টার কোনো শেষ নেই। কখনও ‘‌খলিস্তানি’‌, কখনও ‘‌সন্ত্রাসবাদী–মাওবাদী’‌ তকমা দিয়ে কৃষক আন্দোলনকে নানাভাবে দমানোর চেষ্টা হয়েছে। সর্বশেষ চেষ্টা পাঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকদের গাড়ির ছবি তুলে ধরে কুৎসা রটানো। বোঝাতে চাওয়া হচ্ছে, ‘‌এই চাষিরা মোটেই গরিব নয়, ফলত এদের আন্দোলের কোনো যৌক্তিকতা নেই!‌’‌

সেরকমই একটি ছবিকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল বিতর্কও শুরু হয়েছিল সম্প্রতি। ছবিতে দেখা গেছে, দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তের সিঙ্ঘুতে কৃষকদের বিক্ষোভস্থানে মার্সিডিস বেঞ্জের মতো দেখতে একটি গাড়ির মাথায় চড়ে খবরের কাগজ পড়ছেন এক শিখ ব্যক্তি।

ভাইরাল ছবিটি দেখে নাগরিকদের একাংশ বলতে শুরু করেছিলেন, ‌‘দেশের “‌গরিব”‌ চাষিরা মার্সিডিস বেঞ্জ চড়ছেন! এত টাকা এল কী করে?’‌‌‌ গাড়ির যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছিল, তাতে মার্সিডিজ কোম্পানির ‌লোগোও ছিল। ওই গাড়ির‌ দাম দেড় ‌কোটি টাকা, সেটাও খুঁজে বের করেছেন তারা।

সেই ছবির সত্য কাহিনী উদ্‌ঘাটন করল ভুয়ো খবর যাচাইকারী সংস্থা ‘‌অল্ট নিউজ’। ‌ছবিটি শেয়ার করা হয়েছিল নিশান্ত ইন্ডিয়ার টুইটার হ্যাণ্ডেল থেকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেও সেই অ্যাকাউন্টটি ‘‌ফলো’ করেন। ‌টুইট করেছিলেন রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কাঞ্চন গুপ্ত, লেখক কার্তিকেয়া তান্নাও।

এই কাঞ্চন গুপ্ত বিজেপি ঘনিষ্ট বুদ্ধিজীবী হিসেবেই পরিচিত দিল্লির রাজনৈতিক মহলে। ‘‌আই সাপোর্ট নরেন্দ্র মোদি’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকেও পোস্ট করা হয়েছিল ছবিটি। ‌ওই পেজের ফলোয়ার্স সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। বিপুল সংখ্যক মানুষ তা দেখে ফেলার পরই সেটি সরিয়ে ফেলা হয় পেজ থেকে।

কমেন্টে একজন লিখেছিলেন, ‘‌দেশের গরিব চাষির সস্তা জিপ।’‌ ঠিক সেই সময়েই এক টুইটার ব্যবহারকারী টুইট করে জানান, গাড়ির মালিক হচ্ছেন মনপ্রীত সিং। তিনিই ছবিটি প্রথম টুইটারে শেয়ার করেছিলেন। সেই সূত্র ধরেই অল্ট নিউজ খুঁজে বের করে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর – ‘পিবি১২জেড৮২৮২’‌। পরে কেন্দ্রীয় সড়ক এবং পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ঘেঁটে সব তথ্য জানা যায়। দেখা যায়, গাড়িটি মার্সিডিজ কোম্পানিরই নয়। ওটা ফোর্স মোটর কোম্পানির এসইউভি গুর্খা। যার দাম লাখ দশেক। তারপর সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে দেখা যায়, গাড়িটির নকশা তৈরি করেছে কেরলের কোম্পানি ‘‌কালার গ্লো’‌। তারাই এই গাড়িটিকে মার্সিডিজ জি ওয়াগানের রূপ দিয়েছে।

বিতর্কিত গাড়িটির মালিক মনপ্রীতঅল্ট নিউজকে জানিয়েছেন, ‘‌আমি নিজে ব্যবসা করি। কিন্তু বাড়ির সবাই কৃষক। গত ৫ ডিসেম্বর থেকেই সিঙ্ঘু সীমানায় যাতায়াত র‌য়েছে। সব জায়গা থেকেই লোক আসছেন এখানে। আমার গাড়ি নিয়ে অনেক বিতর্ক হচ্ছে। আসলে এটা মার্সিডিসের মতো দেখতে। কিছুই লুকোচ্ছি না। আমি সময়মতো কর দিয়ে থাকি। খারাপ লাগছে, আমার গাড়ির ছবি ব্যবহার করে ওরা কৃষকদের অপমান করছে। তবে এতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি কৃষকদের পাশে দাঁড়াবই।’‌

এ বিভাগের আরো খবর