ইসরায়েল ও এর আশপাশের দেশগুলো আসছে বছরগুলোতে ভয়াবহ এক ভূমিকম্পের কবলে পড়তে পারে বলে এক গবেষণায় বলা হয়েছে। রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৫ মাত্রার এই ভূমিকম্পে প্রাণ হারাতে পারে শত শত মানুষ।
ইন্টারন্যাশনাল কন্টিনেন্টাল সায়েন্টিফিক ড্রিলিং প্রোগ্রামের (আইসিডিপি) সহায়তায় গবেষণাটি করেছে তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে।
গবেষকেরা ভূমিকম্পের একটি চক্রাকার ধরন দেখিয়েছেন। এতে দেখা যায়, প্রতি ১৩০ বা ১৫০ বছরে ইসরায়েল ও এর আশপাশ এলাকায় ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, সবশেষ ভূমিকম্পের পর আরেকটি আসন্ন ভূমিকম্পের সময়ের ব্যবধান মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে চলে এসেছে।
গবেষণার অংশ হিসেবে ২০১০ সালে ইসরায়েল-ঘেঁষা ডেড সি-এর মাঝামাঝি একটি খোদাই করা যন্ত্র স্থাপন করা হয়। যন্ত্রটি কয়েকশ ফুট গভীর পর্যন্ত খনন করে মৃত সাগরের তলদেশের ২ লাখ ২০ হাজার বছরের ভূ-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে।
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড আর্থ সায়েন্সেজ বিভাগের অধ্যাপক স্যামুয়েল মারকোর মতে, ডেড সি পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু এলাকা হওয়ায় সাগরটিতে বন্যার পানি পৌঁছায় প্রতি শীতে। এর ফলে তলদেশে পলির স্তর পড়ে। প্রতি দুটি স্তর পৃথক একটি বছর নির্দেশ করে।
ভূমিকম্পের সময় পলির স্তরগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে পাক খেয়ে যায়। আগের স্তরগুলো নতুন রূপ পায়।
এসব অনুসন্ধান বিশ্লেষণ করতে গবেষকেরা নির্দিষ্ট কিছু সমীকরণ এবং গণনা মডেল দাঁড় করিয়েছেন। এসবের মাধ্যমে ভূতাত্ত্বিক উপাত্ত থেকে সময়ের সঙ্গে ঘটা ভূমিকম্পগুলোর রূপ বোঝা যায়।
গবেষণায় বলা হয়েছে, এই অঞ্চলে সবশেষ ভূমিকম্প হয়েছিল ৯৩ বছর আগে। পূর্বাভাসে গবেষকেরা বলছেন, অদূর ভবিষ্যতে হতে পারে পরবর্তী ভূমিকম্প। হয়তো কয়েক বছর বা কয়েক দশকের মধ্যে।
ডেড সি-এর উপত্যকায় সবশেষ বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছিল ১৯২৭ সালে। এতে হতাহত হয়েছিলেন শত শত মানুষ। জর্ডানের রাজধানী আম্মান, জেরুজালেম, বেথেলহেম ও জাফাসহ অনেক শহরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
মারকো বলেন, ‘আমাদের পাওয়া সর্বোচ্চ ভালো নির্দেশকটা হলো সবশেষ ভূমিকম্প। এতে জেরুজালেম, বেথেলহেম, আম্মান ও জেরিকোতে প্রায় ২৫০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
‘এসব নগরে যে পরিমাণ মানুষ এখন বাস করে সেই তুলনা করলে দেখা যাবে, জনসংখ্যা বেড়েছে দুই থেকে চার গুণ। এর মানে হতাহতের সংখ্যাও বাড়বে দুই থেকে তিনগুণ, অবকাঠামো ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ না করলেও চলে।’
দীর্ঘ বিরতির পর আরেকটি ভয়াবহ ভূমিকম্প উড়িয়ে দেয়া যায় না বলে মনে করেন এই গবেষক।
‘আমি উদ্বেগ সৃষ্টি করতে চাই না। তবে ভূতাত্ত্বিক গঠনগত দিক থেকে আমরা সক্রিয় একটা সময়ে বাস করছি। ভূ-তাত্ত্বিক রেকর্ড মিথ্যা বলে না। ইসরায়েলে শক্তিশালী একটা ভূমিকম্প হবে।
‘আমাদের পায়ের নিচে কখন কেঁপে উঠবে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী করাটা কঠিন। এটি একটা পরিসংখ্যানমূলক অনুমান। তবে দুর্ভাগ্যবশত, আমাকে বলতেই হচ্ছে, আসছে বছরগুলোতে একটি ভূমিকম্প শত শত মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে।’
কবে নাগাদ ভূমিকম্পটি হতে পারে, এমন প্রশ্নে স্যামুয়েল মারকো বলেন, ‘এটা ১০ বছর অথবা কয়েক দশকের মধ্যে হতে পারে। আগামী সপ্তাহেও পারে। এ জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত প্রস্তুত থাকতে হবে।’