বসনিয়া ও হারজেগোভিনায় চলছে ভারী তুষারপাত। হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় দেশজুড়ে বেড়েছে শীতের তীব্রতা।
এমন পরিস্থিতিতে সেখানকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বিহাক শহরের অভিবাসী ক্যাম্পের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েক গুণ।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বুধবার আগুন লেগে পুড়ে যায় লিপা ক্যাম্পের বেশির ভাগ তাঁবু। অভিবাসীরা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তুষারপাত ও তীব্র শীত থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছে স্লিপিং ব্যাগে।
রেড ক্রিসেন্ট শনিবার সেখানে খাবার-পানি সরবরাহে গেলে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানান অভিবাসীরা।
‘এখানে আমাদের অবস্থা জানোয়ারের মতো। এমনকি জানোয়ারও আমাদের চেয়ে ভালোভাবে থাকে। এভাবে আমরা এখানে মারা পড়ব। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন’, বলছিলেন কাসিম নামের এক পাকিস্তানি অভিবাসী।
এমনিতেই ক্যাম্পটি অভিবাসী ও শরণার্থীদের বসবাসের অনুপযোগী। এ নিয়ে বসনিয়া সরকার আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর তোপের মুখে পড়েছে বিভিন্ন সময়। আগুন লাগার এক সপ্তাহ পরও সে দেশের সরকার ক্যাম্পের বাসিন্দাদের স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে পারেনি।
প্রায় এক হাজার অভিবাসী সেখানে অমানবিক পরিবেশে আটকা পড়ে আছে। দাতা সংস্থাগুলোর সরবরাহ করা অল্প কিছু খাবার ছাড়া তাদের জন্য নেই আর কোনো সুযোগ-সুবিধা।
পুড়ে যাওয়া ক্যাম্পের একটি বড় তাঁবুর মধ্যে ছোট ছোট খুপড়ি বানিয়ে থাকছেন পশ্চিম ইউরোপগামী এই অভিবাসীরা।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দেশটির সরকারকে এই অভিবাসীদের শীতকালীন দুর্ভোগের বিষয়ে সতর্ক করেছিল। নিজেদের মতবিরোধ আপাতত ভুলে গিয়ে তাদের রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
ইন্টারন্যশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) বসনিয়ার চিফ অফ মিশন পিটার ভ্যান ডের অয়েরায়ের্ট এক টুইটবার্তায় বলেন, ‘ক্যাম্পের মানবিক বিপর্যয় শেষ হচ্ছে না। তুষারপাত ও শূন্যের নিচের তাপমাত্রায় সেখানে তাদের জন্য নেই উষ্ণতার কোনো ব্যবস্থা। এভাবে কারো দিন কাটানোর কথা নয়। তাদের জন্য এখনই সাহসী পদক্ষেপ নেয়া দরকার।’
প্রশাসন এই অভিবাসীদের সাময়িকভাবে বিহাকের আরেকটি এলাকায় নিয়ে রাখার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা তাতে প্রতিবাদ জানালে সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
ড্যানিশ রিফিউজি কাউন্সিল, ইউনাইটেড রিফিউজি এজেন্সি ও ইউএন মাইগ্রেশন শনিবার এক বার্তায় এসব অভিবাসীর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
বার্তায় বলা হয়, ‘ক্যাম্পের একমাত্র তাঁবুটি যেকোনো সময় তুষারপাতে পড়ে যেতে পারে। উষ্ণতার ব্যবস্থা না থাকায় সেখানকার বাসিন্দারা ফ্রস্টবাইট, হাইপোথার্মিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।’
জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ না নেয়া হলে তারা ঝুঁকিতে পড়বেন বলে ওই বার্তায় সতর্ক করা হয়।