'প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মাননিধি' প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকা নিয়ে শুক্রবার ভার্চুয়াল কনফারেন্সে তোপ দেগেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর মতাদর্শ নিয়েও।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মোদির প্রতিটি ইস্যু তুলে ধরে তার জবাব দেন তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়। এর পর বিকেলে কেন্দ্রকে সরাসরি নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তৃণমূল কংগ্রেসকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘এই দল বাংলাকে বরবাদ করেছে। রাজনীতির জন্যই অর্থ পাচ্ছে না এ রাজ্যের কৃষকরা।’
প্রসঙ্গত, ভারত সরকার গরিব কৃষকদের ৬ হাজার রুপি করে ভাতা দিচ্ছে।
মোদির জবাবে মমতা বলেন, ‘করোনাকালে যখন সাধারণ মানুষ সমস্যার মধ্যে ছিলেন তখন চুপিসারে আইন আনলেন। অর্ডিন্যান্স চালু করলেন। কিষানদের লুট করা হচ্ছে।’
দলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়ের কটাক্ষ, ‘চাষীদের ৬ হাজার রুপি করে দিয়ে এমন ভাব করছে যেন ৬ লক্ষ রুপি দিয়েছে।’
এদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করে বলেন, ‘কাটমানি না পেলে কোনো কাজ হয় না রাজ্যে। কৃষকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি অর্থ যায়। ফলে তৃণমূল নেতারা কাটমানি পাচ্ছেন না। তাই এ রাজ্যের কৃষকরা বঞ্চিত।’
এদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়েও বিতর্কিত মন্তব্য করেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘এতদিন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ধান্দা করেছে তৃণমূল।’ জবাবে তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘বিজেপিই এমন কথা ভাবতে পারে।’
নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষ করলেও বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রতি মমতা ব্যানার্জির শ্রদ্ধার্ঘ।
সাংসদ সৌগত রায় প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের জবাবে বলেন, ‘গত ১০ বছরে বাংলায় কোনো কৃষক আন্দোলন দেখেছেন? এখানকার কৃষকদের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ক্ষোভ নেই। তারা ভালো আছেন। রাজ্যে কৃষকদের জন্য বরাদ্দ বেড়েছে ৫ গুণ।’
একইসঙ্গে নয়া কৃষি আইন কতটা কৃষক স্বার্থবিরোধী, তা বোঝাতে গিয়ে সৌগত রায়ের ব্যাখ্যা, এই আইন কার্যকর হলে ফসল ফলানোর আগেই দাম স্থির হয়ে যাবে। পুঁজিপতিরা নিজেদের ইচ্ছামতো দামে ফসল কিনে প্রচুর মুনাফা লুটবে। কেন্দ্র ঘুরপথে চুক্তিচাষের ব্যবস্থা করছে বলেও অভিযোগ তার।
মোদিকে তীব্র কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘কৃষকদের সমস্যাগুলো সক্রিয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা না করে প্রধানমন্ত্রী টেলিভিশনের মাধ্যমে ভাষণ দিয়ে তাদের সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জনসমক্ষে তিনি দাবি করেছেন, তার পিএম কিষান যোজনার মাধ্যমে তিনি পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের সহায়তা করতে চান। আসলে অর্ধসত্য বলে মানুষকে উনি বিভ্রান্ত করতে চান।’
কঠোর ভাষায় মোদিকে মমতার জবাব, ‘আসল সত্যিটা হলো মোদি সরকার বাংলাকে সাহায্য করতে কিছুই করেনি। রাজ্যের বকেয়া ৮৫০০০ কোটি টাকা এখনও দেয়নি ওরা, যার মধ্যে বকেয়া ৮০০০ কোটি টাকার জিএসটি আছে।’
মুখ্যমন্ত্রী জানান, কৃষক সমস্যা নিয়ে তিনি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমরের সঙ্গেও আলোচনা করেছিলেন। কেন্দ্রই রাজনৈতিক স্বার্থে রাজ্যের সঙ্গে অসহোগিতা করছে। কেন্দ্র–রাজ্য যৌথ উদ্যোগে রাজ্যে বহু প্রকল্প তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে।
মমতার অভিযোগ, ‘একটা প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। কেন্দ্রের ভূমিকা যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পরিপন্থী।’
সৌগত রায় বলেন, মোদিরা টাকা পাঠিয়ে সরাসরি রাজনৈতিক সুবিধা নেবেন, এটা কেন রাজ্য সরকার মেনে নেবে? তাই বাংলার কৃষকরা যদি কিষান সম্মাননিধির টাকা না পায়, তার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী কেন্দ্রীয় সরকার ও মোদি নিজে। কেন্দ্রের জেদের জন্যই টাকা পাচ্ছেন না কৃষকরা।
জাতীয় কৃষি ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে দমদমের সাংসদ বলেন, মহারাষ্ট্র, কর্নাটকে কৃষকরা ব্যাপক হারে আত্মহত্যা করছেন। মোদি তার সমাধান করেননি। মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদি সরকার কৃষকদের সঙ্গে দীর্ঘ কথাবার্তা চালিয়ে আন্দোলন ভেঙে দিতে চাইছেন।
বাজপেয়ীর প্রতি শ্রদ্ধা মমতার
তৃণমূল ও বিজেপির রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই শুক্রবার ভারতের প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাতে ভোলেননি মমতা।
এদিন সামাজিক মাধ্যমে বাজপেয়ীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পোস্ট করেন মমতা। মোদির সঙ্গে বিরোধ থাকলেও বাজপেয়ীর প্রতি তার শ্রদ্ধা যে অটল, সেটাও বুঝিয়ে দেন তৃণমূল নেত্রী।