খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব বড়দিনেও আনন্দে নেই যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ। করোনা মহামারিতে দেশটিতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও ক্ষুধা।
এসবে ভ্রুক্ষেপ নেই যুক্তরাজ্যের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের। তিনি এখন ব্যস্ত আছেন গলফ খেলা আর নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার উপায় খোঁজা নিয়ে।
শুক্রবার এক নিবন্ধে এমন খবর জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি কেভিন লিপটাক।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ বড়দিন পার করছে দেশটির মানুষ। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে হঠাৎ নতুন কড়াকড়ি আরোপ ও সরকারি অর্থনৈতিক সাহায্য পেতে দেরি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
দেশের এমন খারাপ অবস্থায় তেমন কিছুই করছে না ট্রাম্প প্রশাসন। বরং এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলছে। কয়েক দিনের মধ্যেই কয়েকজন কাছের মানুষকে প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমতার আওতায় ক্ষমা করে দিয়েছেন ট্রাম্প। এদের অনেই বড় ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অপরাধে সাজা ভোগ করছিলেন।
করোনায় নাগরিকদের ২ হাজার ডলার করে সহায়তা দিতে কংগ্রেসে একটি বিল পাস করেছিল ডেমোক্র্যাটরা। বৃহস্পতিবার সেটি আটকে দিয়েছে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির আইনপ্রণেতারা।
রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের সঙ্গেও অনেকটা প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন ট্রাম্প। বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় ফ্লোরিডায় গলফ খেলতে যান ট্রাম্প। সেখানে বসে তিনি টুইট করেন, ‘ফ্লোরিডায় সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের কারচুপির বিরুদ্ধে রিপাবলিকানরা কেন অস্ত্র হাতে লড়াই করছে না?’
সহায়তা বিলে আটকে দিয়ে ট্রাম্প ফ্লোরিডায় গলফ খেলতে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন সাধারণ আমেরিকানরা। সোমবারের আগে বিল নিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসারও সম্ভাবনা নেই।
কেভিন লিপটাক জানাচ্ছেন, পরের সপ্তাহেই অন্তত ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ তাদের বেকার ভাতা থেকে বঞ্চিত হবেন। ১ জানুয়ারিতেই এদের অনেককে বাড়ি ভাড়া দিতে হবে। ফলে গৃহহীন হওয়ার আশঙ্কাতেও রয়েছেন অনেকে। সব মিলিয়ে বছর শেষে আমেরিকানদের সামনে শুধুই অনিশ্চয়তা।
খাদ্য সহায়তা নিয়ে কাজ করা ক্লিভল্যান্ড ফুড ব্যাংকের যোগাযোগ কর্মকর্তা কারেন পোজনা বলেন, ‘আমার মনে হয় মানুষ শঙ্কিত। অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। কারও কারও বেতন কমে গেছে। মহামারির আগেও অভাব ছিল। এখনও আছে এবং সামনেও বছরেও থাকবে বলে মনে হচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহ জুড়ে করোনা সংক্রমণ বাড়ার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি ট্রাম্প। একটি ভিডিওতে টিকা প্রয়োগকে ‘বড়দিনের মিরাকল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি। এদিকে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সিংহভাগ আমেরিকান করোনা টিকা পাবেন কি না তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
অতীতে বড়দিন উপলক্ষে সরকার কোনো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে প্রেসিডেন্ট ও আইন প্রণেতারাও সেটি মেনে চলতেন। ট্রাম্পের আমলে গত চার বছরে এই ঐতিহ্যেও ছেদ পড়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ঘুরতে যাওয়া ও পরিবারের সঙ্গে জমায়েতে মানা করলেও ট্রাম্প সেসবের ধার ধারেননি।
হোয়াইট হাউস থেকে গণমাধ্যমকে বলা হচ্ছে, ট্রাম্প তার দাপ্তরিক কাজের চাপে দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছেন না। অথচ তিনি এমন এক সময়ে ফ্লোরিডায় গলফ খেলতে গেলেন যখন বড়দিনের উৎসবেও লাখ লাখ আমেরিকান না খেয়ে থাকবেন।
ট্রাম্পের গলফ-প্রীতির বিষয়টি নতুন নয়। ইউএসএ টুডের জুলাই মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের মালিকানায় শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ১১টি গলফ মাঠ রয়েছে। দেশের বাইরেও তার মালিকানায় রয়েছে অন্তত চারটি গলফ ক্লাব। এ বছরই দুবাই ও ইন্দোনেশিয়ায় আরও তিনটি গলফ মাঠের মালিক হওয়ার কথা ট্রাম্পের।
৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন ট্রাম্প। নির্বাচনের ফল চূড়ান্ত হওয়ার দিনও তিনি ভার্জিনিয়ায় গলফ খেলছিলেন।
ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত ছয়টি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এই সময়ের মধ্যে তিনি গলফ মাঠে গিয়েছিলেন চার বার। আর টুইটারে পোস্ট করেছেন চারশ বার।
দি গলফ নিউজ নেট ডট কম নামের একটি ওয়েবসাইট জানাচ্ছে, ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে এ বছরের ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৩০২ বার গলফ খেলেছেন ট্রাম্প!
যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের এমন দুঃসময়ে ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ তার দলের নেতারাও।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর রয় ব্লান্ট বলেন, ‘তিনি কী করতে যাচ্ছেন সে ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই।’
ডেবি ডিঙ্গেল নামে দলটির আরেক সিনেটর বলেন, ‘ট্রাম্পের কাছে জনগণের কোনো দাম নেই।’
৬ জানুয়ারি কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফল ঘোষণার কথা রয়েছে। ট্রাম্প এখনও আশা করছেন সেখানে ফল আটকে দিতে পারবেন তার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।
হোয়াইট হাউসকে ট্রাম্পকে জানিয়েছে ফল অনুমোদন ছাড়া আটকে দেয়ার কোনো এখতিয়ার পেন্সের নেই। তবে ট্রাম্প এই বার্তা বুঝতে পেরেছেন কিনা সেটি এখনও স্পষ্ট নয়।