যেসব দেশের সঙ্গে ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পরিকল্পনা করছে পাকিস্তান সে তালিকায় নেই বলে জানিয়েছেন ইহুদিপন্থি রাষ্ট্রটির এক মন্ত্রী।
ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েকটি আরব দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান তাদের অবস্থান তুলে ধরার পর তেল আবিব থেকে এ মন্তব্য এলো।
গেল কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের চুক্তি করেছে চারটি আরব দেশ।
শুরুটা করে সংযুক্ত আরব আমিরাত। গত ১৩ আগস্ট ইহুদি রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের ঘোষণা দেয় আরব বিশ্বের প্রভাবশালী দেশটি। এরপর তাদের দেখানো পথে হাঁটে বাহরাইন, সুদান ও মরক্কো।
এর মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে যাচ্ছে পাকিস্তানও। কিন্তু ইমরান খানের সরকার এসব উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছে, ইহুদি দেশটি নিয়ে তাদের অবস্থান আগের মতোই; ফিলিস্তিন ইস্যুর সমাধান না হলে দেশটির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নয়।
- আরও পড়ুন: ইসরায়েলিদের আমিরাতে স্বাগত
ইসরায়েলের আঞ্চলিক কো-অপারেশন বিষয়ক মন্ত্রী অফির আকুনিস বুধবার টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে অবাক করা তথ্য দেন। জানান, আগামী মাসে ডনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ছাড়ার আগে আরও দুটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের করবে তারা।
তবে দেশ দুটির কোনোটিরই নাম উল্লেখ করেননি আকুনিস। ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, দেশটি দুটির মধ্যে একটি আরব উপসাগরীয় দেশ, তবে সেটি সৌদি আরব নয়।
- আরও পড়ুন: ইসরায়েলের কড়া সমালোচনা সৌদি প্রিন্সের
অন্য দেশটি পূর্ব এশিয়ার। আকুনিসের ভাষায়, পূর্বাঞ্চলের দেশটি একটি ‘মুসলিম দেশ, এটি ছোট দেশ নয়। তবে এটি পাকস্তানও নয়’।
চলতি সপ্তাহের শুরুতেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি নিজেদের কঠিন অবস্থান তুলে ধরে জানান, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের অবসান না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, ইসরায়েলের ব্যাপারে আগের অবস্থানেই আছে তার দেশ
সম্প্রতি আরব আমিরাতে গুরুত্বপূর্ণ সফরের কয়েক দিন পরই এ মন্তব্য করেন কুরেশি। তার ওই সফরের সময় গুঞ্জন ওঠে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে দেশটিতে গোপনে দূত পাঠিয়েছে পাকিস্তান।
ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও উপসাগরীয় অন্যান্য দেশ থেকে কোনো চাপ আছে কি না এমন প্রশ্নের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রী। জানান, তার দেশের জনগণের ‘ফিলিস্তিন ও কাশ্মীর ইস্যুতে গভীর অনুভূতি রয়েছে’।
- আরও পড়ুন: ইসরায়েলিদের আমিরাতে স্বাগত
ইসরায়েল ইস্যুতে মুখ খুলেছে আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়াও। গত সপ্তাহে দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইসরায়েল যতক্ষণ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেবে ততক্ষণ তারাও ইহুদি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে না।
একই অবস্থানের কথা জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার প্রতিবেশী মালয়েশিয়াও।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী নয় ঢাকা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমাদের অবস্থান একই থাকবে।’
ইসরায়েলের সঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর চুক্তি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে ফিলিস্তিন।
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের ঘোষণায় মুসলিম দেশগুলোর প্রতি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে ফিলিস্তিন। এ বিষয়ে ২০০২ সালে স্বাক্ষরিত ‘আরব শান্তি উদ্যোগ’ এর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে তারা।
ওই চুক্তি অনুযায়ী, ইরসায়েলকে ১৯৬৭ সালের সীমারেখা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তখন পশ্চিম তীর ও গাজা নিয়ে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সাপেক্ষে আরব দেশগুলো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে।