কানাডায় নির্বাসনে থাকা পাকিস্তানি মানবাধিকারকর্মী কারিমা বালুচের মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনাটি তদন্তের দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্রুত ও কার্যকর তদন্ত এবং জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, টরন্টোতে রোববার থেকে নিখোঁজ ছিলেন কারিমা। পুলিশ সোমবার তার মরদেহ উদ্ধারের খবর জানালেও বিস্তারিত কোনো তথ্য খোলাসা করেনি।
পাকিস্তানের সেনা ও সরকারের কড়া সমালোচক ছিলেন কারিমা। তিনি দেশটির অশান্ত রাজ্য বেলুচিস্তানের বাসিন্দা ছিলেন।
সে অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করা ছাত্র সংগঠন বালুচ স্টুডেন্টস অর্গেনাইজেশনের (বিএইচও) নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।
২০১৬ সালে বিবিসির ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় ছিল কারিমার নাম। এর আগের বছর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠায় তিনি পাকিস্তান ছেড়ে কানাডায় আশ্রয় নিয়ে চলে যান।
কারিমার বন্ধু ও সহযোদ্ধা লতিফ জোহার বালুচ বিবিসিকে জানান, নির্বাসিত অবস্থায়ও বেলুচিস্তানের মানুষের অধিকারের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব ছিলেন তিনি। এ কারণে বিভিন্ন সময় হুমকিও দেয়া হচ্ছিল তাকে।
সবশেষ অজ্ঞাত কেউ তাকে ‘শিক্ষা দিতে’ চেয়ে ‘বড়দিনের উপহার’ পাঠাবে জানিয়ে হুমকি দিয়েছিল।
কারিমার স্বামী হাম্মাল হায়দারও টরেন্টোতে নির্বাসিত পাকিস্তানি মানবাধিকারকর্মী।
তিনি দ্য গার্ডিয়ানকে জানান, কারিমা প্রায়ই দুপুরের দিকে টরন্টোর সেন্ট্রাল আইল্যান্ড এলাকায় হাঁটতে বের হন।
হাম্মাল বলেন, রোববার হাঁটতে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি কারিমা। খবর পেয়ে টরন্টো পুলিশ টুইটারে তার খোঁজে তথ্য পেতে আপিল করেন। টুইটবার্তায় সোমবার আইল্যান্ড এলাকা থেকে মরদেহ উদ্ধারের খবর জানায় পুলিশ।
কারিমার বন্ধু লতিফ দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘পুলিশ আমাদের বিস্তারিত কিছুই জানায়নি। শুধু বলেছে কারিমার মরদেহ কোনো একটা জলাশয়ের কাছে পড়ে ছিল। তার মরদেহ হস্তান্তরও করেনি।’
পুলিশের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বলা হয়, কোনো অপরাধমূলক ঘটনা নয় হিসেবেই আপাতত কারিমার মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। এতে রহস্যজনক কোনো বিষয় নেই বলে তাদের ধারণা।
তবে হাম্মাল জানান, বেলুচিস্তানে সেনা অভিযান ও সেখানকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে লেখালেখির কারণে কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু হুমকিমূলক বার্তা আসছিল।
‘আমাকে বলা হয়েছিল আমার ভাই ও স্ত্রী (কারিমা) তাদের লক্ষ্যবস্তু। আমি এগুলো গুরুত্ব দিইনি। মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বললেই এ ধরনের হুমকি আসত।’
এর আগে গত মে মাসে, সাজিদ হুসাইন নামের আরেক পাকিস্তানি মানবাধিকারকর্মীর মরদেহ পাওয়া যায় সুইডেনে। বেলুচিস্তানের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করায় হুমকির মুখে সুইডেনে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি।
এসব কারণে হাম্মাল ও লতিফের ধারণা, কারিমার মৃত্যু আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা কিংবা স্বাভাবিক ঘটনা নয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বেলুচিস্তানের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে কাজ করায় ২০১৩ সালে দেশটিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় বিএইচওর কার্যক্রম। এর মধ্যেই সংগঠনটি কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। কারিমা ২০১৫ সালে এর চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
তার মৃত্যুর খবরে বেলুচিস্তান ন্যশনাল মুভমেন্ট (বিএনএম) ৪০ দিনের শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে।