যেকোনো আইনের প্রতিবাদ জানানো মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে বলে মন্তব্য করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে সরকারকে এখনই কৃষি আইন কার্যকর না করারও পরামর্শ দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবারের শুনানিতে কৃষকদের প্রতিবাদ করার মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়ার কোনো প্রশ্নই নেই এমন মন্তব্য করেছে প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদের বেঞ্চ।
যদিও হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের পক্ষে সিনিয়র এডভোকেট হরিশ সালভে আদালতে বলেছেন, আইন কার্যকর করা না হলে কৃষকরা আলোচনার জন্য এগিয়ে আসবে না।
বুধবার থেকে সুপ্রিম কোর্টে কৃষক আন্দোলন নিয়ে বেশ কয়েকটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার শুনানির দ্বিতীয় দিনে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, যে কোনো আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে অন্য কারও ব্যক্তি স্বাধীনতা বা মৌলিক অধিকারে ব্যাঘাত ঘটাবে।
আইনজীবী হরিশ সালভে বলেন, কোনো অধিকারই খর্ব হচ্ছে না। প্রতিবাদ জানানোর মৌলিক অধিকার মানে এই নয় যে অন্য কারও কাজে ব্যাঘাত ঘটানো হবে। দীর্ঘদিন ধরে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তে অবস্থান করছেন কৃষকরা। কিন্তু রাস্তা অবরোধ করে সাধারণ মানুষের ব্যাঘাত ঘটানোর কোনো মানে হয় না।
জবাবে আদালতে পাঞ্জাব সরকারের পক্ষের আইনজীবী পি চিদাম্বরম বলেন, ‘দিল্লি প্রবেশের রাস্তা কারা অবরোধ করেছে তা নিয়ে আমার দ্বিমত রয়েছে। রাস্তায় কাঁটাতারের বেড়া , ইস্পাতের দেওয়াল দিয়ে পুলিশ অবরোধ তৈরী করেছে। এখন আবার রাস্তায় বিশাল কন্টেইনার বসানো হয়েছে। কৃষকরা তাদের দাবি জানাতে দিল্লি আসতে চেয়েছিল। তাদের পথ অবরোধ করা হয়েছে।’
এসময় প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদে বলেন, ‘আমরা একটি চলমান আন্দোলনের মধ্যে রয়েছি। নাগরিকদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকারও রয়েছে। আইন কার্যকর করার ব্যাপারে আরও সময় নেয়া উচিত।’
বুধবারই আদালত বলেছিল, এতবার আলোচনার পরেও যখন সমস্যার সমাধান হয়নি, তখন তা আলোচনায় আর মিটবে না। তাই কৃষক প্রতিনিধিদের রেখে কমিটি গড়ার পরামর্শ দেয় আদালত। বৃহস্পতিবার ফের কমিটি গঠনের কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট । এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট করে দেন, ‘কেন্দ্র ও কৃষক নেতাদের কথা বলতেই হবে। আমরা স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ একটি কমিটি তৈরির কথা ভাবছি, যে কমিটি দু’পক্ষের দাবি-অভিযোগ সব সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।’
কমিটি গঠনের প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন পি চিদাম্বরমও।
টানা ২২ দিন ধরে দিল্লির উপকণ্ঠে চলছে কৃষকদের আন্দোলন। এই নিয়ে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। কৃষক আন্দোলনের জেরে রাজধানীতে যাতায়াতের পথে সমস্যাসহ নানা অভিযোগ তুলে একাধিক জনস্বার্থ মামলা করা হয়। উল্টো দিকে , নতুন তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবি তুলে মামলা করেছিল ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের একটি গোষ্ঠী। সেই মামলাগুলি একত্রিত করে শুনানি চলছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে।