ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পাস করা বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইনের কপি ছিঁড়ে টুকরো করলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আরবিন্দ কেজরিওয়াল। জানিয়েছেন, কৃষকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারবেন না তিনি।
বৃহস্পতিবার দিল্লির বিধানসভায় ভাষণ দেয়ার এক পর্যায়ে আইনের কপিগুলো ছিঁড়ে ফেলেন আম আদমি পার্টির এই নেতা। কেন্দ্রীয় সরকারকে ব্রিটিশদের চেয়ে খারাপ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে দ্রুত আইনগুলো প্রত্যাহার করতে বলেছেন কেজরিওয়াল।
সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কৃষি সংক্রান্ত তিনটি সংস্কার আইন পাশ করে। নতুন আইনে দেশটির কৃষি কার্যক্রমে ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর ফলে কৃষকদের শঙ্কা তাদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ফসল কিনতে সরকার যেমন বাধ্য থাকবে না, তেমনি বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণও থাকবে না। দাম-দর নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা চলে যাবে কোম্পানিগুলোর হাতে। এতে কোম্পানিগুলোর দয়া নির্ভরশীল হয়ে যেতে পারে তাদের জীবন।
আইনগুলো পাশের আগে থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিল ভারতের কৃষক সমাজ। আইন পাশের পর তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে তারা।
কৃষকদের সঙ্গে সরকার কয়েক দফা আলোচনায় বসলেও কোনো ফল আসেনি। আইন তিনটি প্রত্যাহার ছাড়া কোনো সমাধানেই রাজি নয় কৃষক নেতারা।
সরকারের সমালোচনা করে কেজরিওয়াল বলেন, ‘করোনার মধ্যেও আইনগুলো পার্লামেন্টে পাস করা নিয়ে কেন এত তাড়াহুড়া ছিল? এই প্রথম রাজ্য সভার ভোট ছাড়া তিনটি আইন পাস করা হলো।…এই অ্যাসেম্বলিতে আমি তিনটি কৃষি আইন ছিঁড়ে ফেলছি। কেন্দ্রের প্রতি আহ্বান, ব্রিটিশদের চেয়ে খারাপ হবেন না।’
কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর সমালোচনা করে কেজরিওয়াল বলেন, ‘আমি প্রথমে এই দেশের নাগরিক, পরে মুখ্যমন্ত্রী। এই অ্যাসেম্বলি তিনটি আইন প্রত্যাখান করছে। সেই সঙ্গে কৃষকদের চাওয়া মেটাতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’
কেজরিওয়াল জানান, বিক্ষোভরত কৃষকদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের দাবির বিষয়ে সরকার কবে সজাগ হবে প্রশ্ন তুলে দিল্লির এই নেতা বলেন, ‘২০ দিনের বিক্ষোভে ২০ জনের বেশি কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এই আন্দোলনে গড়ে প্রতিদিন একজন করে কৃষক শহিদ হচ্ছেন।’
কেজরিওয়াল কেন্দ্রকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, কৃষকেরা এমনিতেই তাদের বাড়ি সরকারের এমন ভাবাটা ভুল হবে। সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দেন, ১৯০৭ সালে কৃষকেরা ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে টানা নয় মাস আন্দোলন করেছিল। সরকারকে বাধ্য করেছিল কিছু আইন বাতিল করতে।