ভারতের কৃষক আন্দোলনে অংশ নেয়া শিখ সম্প্রদায়ের গুরু বাবা রাম সিং আত্মহত্যা করেছেন।
বুধবার দেশটির হরিয়ানা রাজ্যের গুরুদুয়ারার এ গ্রন্থি (পুরোহিত) নিজেকে গুলি করেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার বিকেলে কুন্ডলির দিল্লি-সনিপত সীমান্ত এলাকায় পৌঁছান ৬৫ বছর বয়সী রাম সিং। কৃষকদের আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল সিনঘু সীমান্ত থেকে ওই এলাকা দুই কিলোমিটার দূরে।
আত্মহত্যার আগে লেখা চিরকুটে রাম সিং বলেন, ‘সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও যন্ত্রণা জানাতে’ জীবন বিসর্জন দিচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘নিজেদের অধিকার নিশ্চিতে সংগ্রামরত কৃষকদের কষ্ট আমি বুঝতে পারি। আমি তাদের যন্ত্রণার সঙ্গে শামিল হয়েছি। কারণ সরকার তাদের সঙ্গে ন্যায়বিচার করছে না।
‘অন্যায় আচরণ করা পাপ। একই সঙ্গে অন্যায় মেনে নেয়াও পাপ। কৃষক আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে কয়েক জন সরকারের দেয়া পদক ফিরিয়ে দিয়েছেন। এ অবস্থায় নিজের জীবন বিসর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি।’
সনিপাত পুলিশের উপকমিশনার শ্যাম লাল পুনিয়া বলেন, গাড়ির ভেতরে রাম সিং নিজেকে গুলি করেছেন। পানিপতের পার্ক হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাম সিংয়ের অনুসারীরা জানান, শুক্রবার হরিয়ানার কার্নেল শহরে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে।
এর আগে মঙ্গলবার ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের হরিয়ানা শাখার প্রধান গুরনাম সিং চাধুনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন রাম সিং। এ সময় ভারত সরকার ও কৃষকদের মধ্যে চলমান অচলাবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন তিনি।
চাধুনি বলেন, ‘আমার তাঁবুতে বসে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে কথা হয় রাম সিংয়ের সঙ্গে। চলমান পরিস্থিতি জানতে চান তিনি। কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে উদ্বেগের কথাও জানান তিনি।’
রাম সিংয়ের আত্মহত্যাকে ‘অনেক বড় ত্যাগ’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন চাধুনি।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল থেকে শুরু করে ভারতের বেশির ভাগ বিরোধী দলের নেতা রাম সিংয়ের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় হরিয়ানা সরকার কোনো মন্তব্য করেনি।
ভারতে সেপ্টেম্বরে পাস হওয়া বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দেশটির হাজার হাজার কৃষক নভেম্বরের শেষ সময় থেকে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার দিল্লি সীমান্তে অবস্থান করছেন।
আন্দোলনরত কৃষকদের প্রতিনিধিরা জানান, আন্দোলন চলাকালে ২০ জনেরও বেশি কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
মহারাষ্ট্র রাজ্যের এক কৃষক নেতা বলেন, আন্দোলন শুরুর পর থেকে প্রতিদিন গড়ে এক জন কৃষকের মৃত্যু হচ্ছে।