বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাকিস্তানের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আবদার

  •    
  • ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৭:২১

১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানে পালিত হয় ঢাকা পতন দিবস। এই দিনে দ্য ডনে লেখা কলামে দেশটির সাবেক তথ্যমন্ত্রী জাভেদ জব্বার দাবি করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় অবাঙালিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। আর তার দেশ ‘একটু বেশি বাড়াবাড়ি করেছে’। এ জন্য দুই পক্ষ পরস্পরের প্রতি ক্ষমা চেয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারে।

মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঘটনার জন্য বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে পরস্পরের প্রতি ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক এক মন্ত্রী।

সেনা শাসক পারভেজ মোশাররফের আমলে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া জাভেদ জব্বারের দাবি, ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে অবাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে বাঙালিরা।

তিনি মুক্তিযুদ্ধকে তুলনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সঙ্গে। তার দাবি, সে সময় বাঙালিরা অবাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে, ভারত সুযোগ নিয়ে ‘দুই ভাইয়ের মধ্যে’ বিভেদ তৈরি করেছে। আর ভৌগলিক ‍দূরত্বের কারণে পাকিস্তান তার মাটি রক্ষা করতে পারেনি।

যুদ্ধ চলাকালে তার দেশ যে হত্যা, ধ্বংস, নারী নির্যাতন করেছে, তার বর্ণনা উপেক্ষা করে, এক শব্দে বর্ণনা করেছেন সাবেক পাকিস্তানি মন্ত্রী।

শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে দারুণ মিল আছে দাবি করে অদূর ভবিষ্যতে ‘সোনার বাংলা’ ও ‘সোনার পাকিস্তানের’ এক হওয়ার খায়েশও জন্মেছে পাকিস্তানের এই রাজনীতিক ও কলাম লেখকের মধ্যে।

বাংলাদেশের বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানে পালিত হয় ঢাকা পতন দিবস। তবে গত কয়েক বছর ধরে এই দিনটিকে স্মরণ করাও ছেড়ে দিয়েছে পাকিস্তান। যদিও সে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে নানা ধরনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছাপা হয়, যাতে ৭১ এর দায় দেয়া হয় বাঙালিদের, দায় দেয়া হয় মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করা ভারতকে।

‘ঢাকা পতনের’ ৪৯ তম বার্ষিকীতে বুধবার পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্য ডন’ ছেপেছে সাবেক মন্ত্রীর কলাম। এর শিরোনাম করা হয়েছে, ‘ফ্রম ১৯৭১ টু, ২০২১’।

এতে বলা হয়, আগামী বছর বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক ও নাগরিক সমাজ পর্যায়ে সম্পর্ক বাড়াতে পারে। আর পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তান ক্ষমা চেয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারে।

পাকিস্তানি মন্ত্রীর এ ক্ষেত্রে পরামর্শ, প্রথমে ক্ষমা চাইবে পাকিস্তান। এতে গলবে বরফ।

তিনি লেখেন, বাংলাদেশ যদি ‘অবাঙালিদের হত্যার জন্য’ আনুষ্ঠানিক ক্ষমা নাও চায়, তাহলেও সম্পর্ক উন্নয়নে এ দায় পাকিস্তানের ওপর থেকে যাবে।

একাত্তরের নৃশংসতার জন্য পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক ক্ষমা না চাইলেও দেশটির সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ও পারভেজ মোশাররফ দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে উল্লেখ করেন। তবে তার দেশে বুদ্ধিজীবী, গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও রাজনীতিকদের একাংশ আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার পক্ষে সোচ্চার বলেও উল্লেখ করেন জাবেদ জব্বার।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা যে নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংস, নারী নির্যাতন করেছিল, তাকে ‘বেশি বাড়াবাড়ি’ হিসেবে উল্লেখ করেন দেশটির সাবেক এই মন্ত্রী।

তার দেশের সেনাবাহিনীর হত্যা-নির্যাতনের কথা উল্লেখ না করলেও জাভেদ জব্বার দাবি করেছেন, তাদের পক্ষে থাকা লোকদের নাকি গণহত্যা করা হয়েছে। একাত্তরের ১ মার্চ থেকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীরা’ (স্বাধীনতাকামী বাঙালি) এই অংশে অবাঙালিদের উপর ‘নির্মমভাবে’ চড়াও হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।

‘তিক্ত অতীত’ ভুলে গিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ ভবিষ্যত গড়ার তাগিদ দেয়া সাবেক পাকিস্তানি মন্ত্রী বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সমালোচনাও করেন।

তার দৃষ্টিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে অবিচার করে কয়েকজনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের দুটি প্রজন্মের মধ্যে পাকিস্তান প্রশ্নে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।

জাভেদ জব্বারের অভিযোগ, গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপক প্রচার চালিয়ে পাকিস্তান বিদ্বেষী মনোভাব তৈরি করে রেখেছে।

জাভেদের দাবি, মুক্তিযুদ্ধে আত্মসমর্পণ করলেও তাদের সৈন্যরা যে বীরত্ব দেখিয়েছে সেটা ভুলা যাবে না। তার দাবি, তাদের ছিল মাত্র ৩৪ হাজার নিয়মিত এবং ৪৫ হাজার অনিয়মিত সেনা। অন্যদিকে বিপক্ষে ছিল আড়াই লাখ ভারতীয় সেনা এবং দেড় লাখ মুক্তিযোদ্ধা।

‘দায় ভারতের’

মুক্তিযুদ্ধকে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী জব্বার বলেন, ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলা গৃহযুদ্ধের মতোই ছিল একাত্তর। যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের পর, সবগুলো রাজ্য এক থাকলেও, পূর্ব আর পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে দূরত্ব ছিল, হাজার মাইলের বেশি। দূরত্ব বেশি হওয়ায়, পূর্ব অংশের বাসিন্দারা সুযোগ সুবিধাও কম পেতেন পশ্চিমের তুলনায়। আর এই অবস্থার সুযোগ নিয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এবং তাদের সহযোগিতা করেছে ‘ভারতীয় চররা’।

পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রীর দাবি, ২০২১ সাল তার দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের জন্য এক সুযোগ নিয়ে আসতে পারে। তার দাবি, ১৯৭১ সালে বাঙালি নিধন তাদের উদ্দেশ্য ছিল না, লক্ষ্য ছিল কেবল দেশের ঐক্য অঁটুট রাখা।

সোনার বাংলা ও ‘সোনার পাকিস্তান’ এক হওয়ার স্বপ্ন

কলামে পাকিস্তানি রাজনীতিক জব্বার লেখেন, বাস্তবতা মেনে অতীত ভুলে দুই দেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে, লাভবান হতে পারে।

তিনি লেখেন, “দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দুই মুসলিম দেশ ২০২১ সাল থেকে নতুন ভবিষ্যত গড়ার জন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে পারে। সামরিক, সাংস্কৃতিক, শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও ক্রীড়াসহ বিভিন্ন খাতে বিনিময়ের মাধ্যমে পাকিস্তানের সোনালী মাটির সঙ্গে সোনার বাংলা মাটি ও আত্মার এক নতুন বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চমৎকার ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারে।’

বাংলাদেশের বিছিন্ন হয়ে যাওয়ায়টা প্রতিটা পাকিস্তানির এখনও দুঃস্বপ্ন হয়ে তাড়া দেয় উল্লেখ করে জব্বার বলেন, ‘পাকিস্তান সরকারের অভ্যন্তরীণ কিছু মতবিরোধে দুই দেশের কূটনীতিক সম্পর্ক এগুচ্ছে না।’

এ বিভাগের আরো খবর