ভারতের যৌথ কৃষক আন্দোলনের মধ্যেই এককভাবে তিন ‘বিতর্কিত’ কৃষি আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলো ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন। শীর্ষ আদালতের কাছে তাদের দাবি, এই আইন বড় করপোরেটের সামনে কৃষকদের দুর্বল করে তুলবে।
এদিকে, কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করতে সরকার প্রস্তুত বলে এদিন জানান কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর।
সাধারণ মানুষের স্বার্থে কৃষকদের আন্দোলন থামিয়ে আলোচনায় বসার আর্জি জানান কৃষিমন্ত্রী। তোমর আরও জানান, কেন্দ্র সরকার কৃষক ইউনিয়নকে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। কিন্তু কোনো জবাব মেলেনি।
কৃষকদের যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৪ ডিসেম্বর সারা দেশে নয়া কৃষি আইন নিয়ে বিক্ষোভ দেখাবেন কৃষকরা। তার আগে ১২ ডিসেম্বর দিল্লি-জয়পুর মহাসড়ক অবরোধ হবে।
আদানি, আম্বানিদের প্রতিষ্ঠান ও সামগ্রী বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছে। তবে আন্দোলনের এ পর্যায়ে একটি কৃষক সংগঠনের এককভাবে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না কৃষকদের যৌথ মঞ্চের নেতৃত্ব।
অন্যদিকে, কৃষক আন্দোলনের বিরুদ্ধে পথে নামছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। নতুন কৃষি আইন নিয়ে দেশের মধ্যে ব্যাপক প্রচার কর্মসূচি শুরু করছে তারা। আগামী বেশ কয়েকদিন ধরে বিজেপি সারা দেশে প্রায় ১০০ টির বেশি সাংবাদিক বৈঠক ও ৭০০-র বেশি কৃষক সভা করার পরিকল্পনা করেছে।
এসব সভায় নতুন আইনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হবে। সাধারণ বিজেপি কর্মী-সমর্থকের পাশাপাশি এতে অংশ নেবেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে মন্ত্রীরাও। অর্থাৎ, চলতি কৃষক আন্দোলন আলোচনার মাধ্যমে শান্ত করতে না পেরে পাল্টা জনমত গড়ে তুলতে চাইছে বিজেপি।
উল্লেখ্য, কৃষকদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার টেবিলে বসলেও জট কাটছে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকও নিষ্ফল হয়। তারপরই লিখিত আকারে কৃষকদের খসড়া প্রস্তাব পাঠায় সরকার। যা খারিজ করে দেন কৃষকরা।
কৃষক আন্দোলন শান্ত করতে নয়া কৃষি আইনে কিছু সংশোধন করার প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই সংশোধনীর ফলে বেশ কয়েকটি ধারার গুরুত্ব কমবে এবং রাজ্য সরকারগুলোর গুরুত্ব বাড়ার কথা। যে ধারাগুলো নিয়ে প্রধান আপত্তি তার মধ্যে তিন নম্বর ধারায় কোনো বদল আনা হচ্ছে না।
তিন নম্বর ধারা বলছে, উৎপাদিত শস্য ক্রয় এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কৃষক এবং ক্রেতাদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হবে। এই ধারায় কৃষকদের শস্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিকল্প বাড়লেও তাঁরা মনে করছেন, এর ফলে এক সময় সরকার নিজে গ্রাহক না হয়ে বেসরকারি সংস্থাদের সামনে এগিয়ে দেবে।
তিন নম্বরে বদল না হলেও চার এবং ছয় নম্বর ধারায় সরকার যে বদলের প্রস্তাব এনেছে তাতে রাজ্য সরকার গুরুত্ব ফিরে পাচ্ছে।
চার নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, প্যান কার্ড আছে এমন যে কেউ কৃষকদের থেকে শস্য কিনতে পারবে। কিন্তু সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী, কে কিনতে পারবে বা পারবে না তা ঠিক করে দেবে রাজ্য সরকার। ক্রেতাদের নথিবদ্ধ করতে আইন বানাতে হবে রাজ্যকে।
ছয় নম্বর ধারাতেও নমনীয়তা দেখিয়েছে কেন্দ্র। এই ধারা কার্যকর হলে শস্য ক্রয়-বিক্রয়ে কোনো বাজারমূল্য, সেস বা লেভি দাবি করতে পারবে না কেন্দ্র। কিন্তু প্রস্তাবিত সংশোধনে বেসরকারি মণ্ডির ওপর কর ধার্য করতে পারবে রাজ্যগুলো।
এরপর, ১৫ নম্বর ধারায় দায়রা আদালতের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হয়েছিল। সেখানে কোনো রকম অভিযোগ থাকলে তা ডিসপুট-রেজোলিউশন মেকানিজমের মাধ্যমে সমাধানের কথা বলা হয়েছিল এবং সেই মেকানিজম ছিল মহকুমা শাসক পর্যায়ে। কিন্তু সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে কৃষকরা দায়রা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন।