ভারতের অসম রাজ্যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন সংকট। চূড়ান্ত তালিকায় নাম ওঠা প্রায় পাঁচ হাজার মানুষকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ অবস্থায় আবার তালিকা ও হেনস্তার মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন বাঙালিরা।
২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট অসমের চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা প্রকাশিত হয়। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের নজরদারিতে তিন কোটি ৩০ লাখ ২৭ হাজার ৬৬১ জন আবেদনকারীর মধ্যে তালিকাভুক্ত হন তিন কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার ৪ জন।
চূড়ান্ত তালিকায় নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হন ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন। এদের সবাইকে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে।
তালিকা থেকে বাদ পড়াদের বেশির ভাগই বাঙালি, কিছু নেপালিও আছেন। ফলে এমনিতেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অসমের বাঙালিরা।
এ অবস্থায় রাজ্যের এনআরসি সমন্বয়ক হীতেশ দেবশর্মা গৌহাটি হাইকোর্টে হলফনামায় জানিয়েছেন, তালিকাভুক্ত ১০ হাজার ১৯৯ জনের নাম আবার যাচাই করে চার হাজার ৭৯৫ জন ‘ঘোষিত বিদেশি’ বা ‘সন্দেহজনক ভোটারের’ নাম চূড়ান্ত তালিকায় পাওয়া গেছে।
ঘোষিত 'অনাগরিক' রহিমা বেগমের নাম এনআরসি তালিকায় থাকা নিয়ে গৌহাটি আদালতে মামলা হয়। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এনআরসি কর্তৃপক্ষকে হলফনামা দিতে বলেন আদালত।
হীতেশ আদালতে হলফনামা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, এ বিষয়ে মুখ খোলার কোনো এখতিয়ার তার নেই।
এনআরসি সমন্বয়কের হলফনামার পরেই অসমে নতুন করে এনআরসি প্রক্রিয়া শুরু নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে অসম রাজ্য নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতির চেয়ারম্যান তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, ‘অসমকে বাঙালিশূন্য করার ষড়যন্ত্র চলছে। ফের এনআরসির অর্থ আবার হয়রানির শিকার হবে বাঙালিরা।’
দেশটির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ‘বাঙালি বিদ্বেষী’ বলে মন্তব্য করেন তপোধীর। বিজেপির বিরুদ্ধে সব বাঙালিকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য।
তবে ১৯ লাখেরও বেশি মানুষ নাগরিকত্ব না পেলেও ফের সবার নাগরিকত্ব যাচাইয়ের দাবি জানিয়েছে অসমের বাঙালি বিদ্বেষীরা।
বিজেপি এই দাবির সঙ্গে একমত। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ তালিকা তারা মানে না, ফের ক্ষমতায় গেলে নতুন করে এনআরসি হবে। এখনও তালিকা নিয়ে বিজ্ঞপ্তিও জারি করেনি সরকার।
১৯৭১ সালের ২৪ মার্চকে ভিত্তি বছর ধরে অসমে এনআরসি প্রক্রিয়া শুরু হয়। কোটি কোটি রুপি খরচ করে তৈরি হয় নাগরিকদের তালিকা। সেই তালিকাও বাতিল করতে চায় বিজেপি।