নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের দুটি মসজিদে হামলার আগে বেশ কিছু গাফিলতি ছিল কর্তৃপক্ষের। তবে দুঃখজনক ঘটনাটি অনিবার্যই ছিল।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ক্রাইস্টচার্চ হত্যাকাণ্ডে গঠিত তদন্ত কমিশন এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে এমন তথ্যই উঠে এসেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
২০১৯ সালের মার্চে ক্রাইস্টচার্চে ব্রেনটন ট্যারান্ট নামে এক শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী দুটি মসজিদে ঢুকে ৫১ জন মুসল্লিকে হত্যা করেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল ওই সময় ক্রাইস্ট চার্চে অবস্থান করছিল। আল নূর মসজিদে নামাজ পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ক্রিকেটাররা। হোটেল ছাড়তে দেরি হওয়ায় মারাত্মক পরিণতির হাত থেকে বেঁচে যান তারা।
ওই হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করে নিউ জিল্যান্ড সরকার।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সের বিষয়ে যথাযথ তদারকি নিশ্চিতে ব্যর্থ ছিল কর্তৃপক্ষ। এ সুযোগে বিপুল অস্ত্র মজুদে সক্ষম হন হত্যাকারী।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঘটনার সময় ইসলামপন্থি সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে অতি মাত্রায় ব্যস্ত ছিল কর্তৃপক্ষ।
অবশ্য সেসব গাফিলতি সংশোধন করেও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ট্যারান্টকে হত্যাকাণ্ড ঘটানো থেকে বিরত রাখা যেত না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের পর নিউ জিল্যান্ড পুলিশ বেশ কিছু সূত্র পায়, যা দেখে বোঝা যায়, ট্যারান্টের পরিকল্পনা আগে থেকে জানা সম্ভব ছিল না। এসবের মধ্যে রয়েছে তার স্টেরয়েড আসক্তি, ভুল করে নিজেকে গুলি করার পর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও নিয়মিত উগ্র ডানপন্থি ওয়েবসাইট দেখা।
চলতি বছরের শুরুতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে ট্যারান্টকে প্যারোলবিহীন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এদিকে প্রতিবেদন নিয়ে নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন বলেন, ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিকল্পনা ও পরিচালনা শনাক্তে সরকারি কোনো সংস্থার গাফিলতি ছিল এমন কিছু পায়নি কমিশন।
‘তবে তারা এমন বেশ কিছু বিষয় চিহ্নিত করেছে যা থেকে শেখার আছে। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তনের বিষয়ও কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।’
জাসিন্ডা আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স নিয়ে তদারকির ব্যর্থতা ও সম্পদের অপ্রতুলতার বিষয় নিয়েও তার মতামত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘ওইসব বিষয়ে যথাযথ নজর দিলে হামলা ঠেকানো যেত, এমন কিছু কমিশনের অনুসন্ধানে উঠে আসেনি। তারপরও এগুলোকে গাফিলতি হিসেবেই দেখা হবে এবং এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখিত বেশ কিছু সুপারিশের বিষয়ে নিউ জিল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, নতুন জাতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থা প্রতিষ্ঠা, বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ চিহ্নিত ও ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে আরও আধুনিকীকরণের প্রস্তাবসহ সব সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।
এ ছাড়া বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীভিত্তিক মন্ত্রণালয় গঠন ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য স্নাতক কর্মসূচি চালুর পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার।
এদিকে হামলার প্রধান লক্ষ্যস্থল আল নূর মসজিদের ইমাম প্রতিবেদন বিষয়ে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ মুসলমান সম্প্রদায়কে রক্ষার চেয়ে তাদের যে ওই সময় অতি মাত্রায় সন্দেহের চোখে দেখেছিল, তা তদন্ত প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্য ও বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের জন্য মুসলমান সম্প্রদায়কে দায়ী করে আসা হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক কুসংস্কার ও অবচেতন পক্ষপাত যে সরকারি সংস্থার মধ্যে বিরাজ করছে, তা প্রতিবেদন থেকেই বোঝা যায়। এসব দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা উচিত।’
মুসলমান সম্প্রদায় ও পুলিশের মধ্যে আস্থা পুনর্নির্মাণে প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে জোর দেন ইমাম।