করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিজেদের উদ্ভাবিত ‘স্পুতনিক ভি কোভিড-১৯ টিকা’ ব্যাপক সংখ্যায় দেয়া শুরু করেছে রাশিয়া।
শনিবার মস্কোর ৭০টি ক্লিনিকের মাধ্যমে টিকাগুলো বিতরণ করা হয় বলে রাশিয়ার রাজধানীর করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের বরাতে রয়টার্সের খবরে জানানো হয়।
টাস্কফোর্স থেকে বলা হয় রাশিয়ায় তৈরি ভ্যাকসিন প্রথমে দেয়া হবে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের এবং শিক্ষক ও সামাজিক কর্মীদের। কারণ, পরিস্থিতি বিবেচনায় তারাই করোনায় কংক্রমিত হওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন।
করোনা টাস্কফোর্স থেকে ফোনে বার্তা পেয়েছেন মাস্কোভিতে নামক একজন প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক। বার্তাটি রয়টার্সেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তাতে লেখা- ‘আপনি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। বিনামূল্যে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন পাওয়ার অগ্রাধিকারের তালিকায় আছেন আপনি।’
রাশিয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের এপিসেন্টার মস্কো। গত চব্বিশ ঘণ্টায় শহরটিতে নতুন করে প্রায় ৯ হাজার জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সেপ্টেম্বর থেকেই সেখানে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ন্ত।
মস্কোয় ব্যাপকহারে করোনা টিকা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন মেয়র সের্গেই সোবইয়ানিনও। নিজের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে লিখেছেন, ‘স্বাস্থ্য ও জীবন নিয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা শিক্ষক, চিকিৎসক, সামাজিক কর্মীদের মধ্যে ৫ হাজার মানুষ গত পাঁচ ঘণ্টায় টিকার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছেন।’
যাদের টিকা দেয়া হচ্ছে তাদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ধরা হয়েছে ৬০ বছর। তবে যাদের অন্যকোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে, গর্ভবতী নারী এবং যারা গত দুই সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগেছেন তাদেরকে এই টিকাদান কর্মসূচির বাইরে রাখা হয়েছে।
রাশিয়া করোনা প্রতিরোধী দুটি টিকা উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে সরাসরি রুশ অর্থায়নে উদ্ভাবন করা হয়েছে ‘স্পুতনিক ভি ভ্যাকসিন’। অপরটি উদ্ভাবন করেছে সাইবেরিয়া ভেক্টর ইনস্টিটিউট। এটি চূড়ান্ত ধাপের ট্রায়ালে আছে।
করোনার টিকা উদ্ভাবনে রাশিয়া যে দ্রুততা দেখিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে বিজ্ঞানীদের। তাদের দাবি, টিকাটি বাজারে ছাড়ার আগে চূড়ান্ত ধাপের ট্রায়ালে বৃহৎ পরিসরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি।
‘স্পুতনিক ভি’ টিকা নিতে হয় দুটি ডোজে। প্রথমটি নেয়ার ২১ দিন পর নিতে হয় দ্বিতীয় ডোজ।
করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে সকল পার্ক ও ক্যাফেসহ মস্কোর সব জনসমাগমস্থল বন্ধ করে দেয়া হয় গত মার্চেই। যারা করোনা নিয়ম ভঙ্গ করছে সড়কগুলোতে তাদের ওপর কড়া নজর রাখছে পুলিশ।
এদিকে, শনিবার রাশিয়া স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২৮ হাজার ৭৮২ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে দেশটিতে মোট শনাক্ত ছাড়িয়েছে ২৪ লাখ ৩১ হাজার। মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪২ হাজার।
বৈশ্বিক তালিকায় করোনা আক্রান্তে বিশ্বের বৃহত্তম দেশটির অবস্থান চতুর্থ। ১ কোটি ৪৫ লাখ ছাড়ানো আক্রান্ত নিয়ে এই তালিকায় শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র।
জনগণকে করোনার টিকাদানে অনেক এগিয়ে গেছে যুক্তরাজ্যও। ফাইজার ও বায়ো-এনটেকের উদ্ভাবিত ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকর এই টিকার প্রথম ব্যাচ পৌছেঁছে দেশটিতে।
টিকাগুলো অজ্ঞাত স্থানে কেন্দ্রীয় একটি ভাণ্ডারে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে যুক্তরাজ্য জুড়ে হাসপাতালগুলোর টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে বণ্টন করা হবে।
যুক্তরাজ্য সরকার এই টিকার চার কোটি ডোজ অর্ডার করেছে, যা দেশটির দুই কোটি মানুষকে টিকার দেয়ার জন্য যথেষ্ট।