বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ভারতের কৃষকদের আন্দোলন পঞ্চম দিনে পড়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠক করেছেন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমারের সঙ্গে।
সোমবার সকালে তাদের বৈঠক হয় বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এর আগে রোববার গভীর রাতে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি জে পি নাড্ডার বাসভবনে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও নরেন্দ্র সিং তোমার।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আশ্বাসের পরও প্রতিবাদ জারি রেখেছে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা। সমর্থন জানাতে দক্ষিণের রাজ্য কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে এসেছেন কৃষকরা। ছাত্র, যুব, মহিলা, আইনজীবীদের নানা সংগঠন কৃষকদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে।
রোববার ৩০টি কেন্দ্রীয় কৃষক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ রাজধানী দিল্লি প্রবেশের পাঁচটি সড়ক সনিপাত, রোহটাক, জয়পুর, গাজিয়াবাদ-হাপুর ও মথুরা অবরোধের হুমকি দেন।
দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিনঘু ও তিকরি সীমান্তে কৃষকরা অবস্থান করায় হরিয়ানা রাজ্যে ঢুকতে ও বের হতে যাত্রীদের বিকল্প সড়ক ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।
রোববার ‘মান কি বাত’ অনুষ্ঠানে মোদি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কৃষকদের যে আশ্বাস দিয়েছিল, এ আইনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
যুব সম্প্রদায় বিশেষ করে যারা কৃষিবিজ্ঞানে পড়াশোনা করছেন, তাদের গ্রামে গিয়ে কৃষকদের এই নতুন আইন সম্পর্কে বোঝাতে বলেন মোদি।
কৃষকদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করতেই নতুন কৃষি আইন করতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র, এমন প্রচার চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপির নেতারা।
ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের সভাপতি যোগিন্দার সিং উগ্রাহনের প্রশ্ন, “কোন কৃষক এই আইন আনতে বলেছে? ‘এক দেশ এক বাজারের’ তত্ত্ব বাজে কথা। পুঁজিপতিদের খুশি করতেই নতুন কৃষি আইন করা হয়েছে।”
ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (ক্রান্তিকারী) সভাপতি সুরজিৎ সিং ফুলে বলেন, ‘১৯৭৬ সালে পাঞ্জাবের বাইরে গম বেচায় নিষেধাজ্ঞা জারি করায় আঞ্চলিক বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। সে সময় ৪০ দিনে প্রায় এক হাজার ৪৫০ জন কৃষককে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের নভেম্বরে হাইকোর্ট জানায়, কৃষকরা যেখানে খুশি তাদের ফসল বেচতে পারবেন; সরকার বাধা দিতে পারবে না। ১৯৭৭ সালে জনতা দল ক্ষমতায় এসে জানায়, গোটা দেশই বাজার।
‘তারপর থেকে বিহার, উত্তর প্রদেশের ধান পাঞ্জাবে আসে। মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ, কমলা লেবু, কলা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। পাঞ্জাবের কৃষকরা তাদের ফসল দিল্লির আজাদপুর মান্ডিতে গিয়ে বিক্রি করে। নতুন কিছু নেই এই আইনে। শুধু করপোরেটদের খুশি করতে এই আইন আনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আসলে এই আইনের মাধ্যমে এক দেশে দুই বাজার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। একটা কৃষিপণ্য বিপণন নিয়ন্ত্রিত বাজার আর অন্য বাজারে কোনো নিয়মকানুন নেই। প্যান কার্ড বা সরকারি পরিচয়পত্র দেখিয়ে যে কেউ ফসল কিনতে পারে। অথচ দামের কোনো নিশ্চয়তা নেই।’ ভারত সরকারের নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। প্রায় ৫০০ কৃষক সংগঠন মোদি সরকারের আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করছে।
তাদের দাবিগুলো হলো, নতুন কৃষি আইন প্রত্যাহার, টেকসই ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আইন বলবৎ ও বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল প্রত্যাহার।
দাবি আদায়ে ডাকা ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার থেকে কৃষকরা জড়ো হতে থাকেন পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানায়। দিল্লিতে প্রবেশের পাঁচটি সড়ক পথেই অবস্থান নিয়েছেন কৃষকরা।