শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে খুনের বদলা নেওয়ার কথা জানিয়েছে ইরান।
দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সামরিক উপদেষ্টা হোসেন দেহঘন হামলাকারীদের ‘বজ্রের মতো আঘাত’ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
শুক্রবার ইরানের রাজধানী তেহরানের কাছে দামাবন্দ জেলার আবসারদ এলাকায় ফাখরিজাদেহকে হত্যা করা হয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের গোপন পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির পেছনে ফাখরিজাদেহর হাত ছিল বলে ধারণা পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ এই ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের নিন্দা’ জানাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জারিফ এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘ইরানের বিশিষ্ট বিজ্ঞানীকে আজ সন্ত্রাসীরা খুন করেছে।’
হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে জারিফ বলেন, ‘এটিতে ইসরায়েলের ভূমিকার জোর ইঙ্গিত আছে।’২০১৮ সালের এপ্রিলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিবিষয়ক আলোচনায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপস্থাপনায় ফাখরিজাদেহর নাম নির্দিষ্ট করে উল্লেখ ছিল।
ইসরায়েল, হোয়াইট হাউজ, পেন্টাগন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী জো বাইডেনের অন্তর্বর্তী দল ফাখরিজাদেহ হত্যার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত মাজিদ তাখত রাভানচি জানান, হত্যাকাণ্ডটি আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। অঞ্চলটিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে ফাখরিজাদেহকে হত্যা করা হয়।
ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেন সালামি বলেন, ‘আধুনিক বিজ্ঞানে আমাদের প্রবেশ রোধের লক্ষ্যে দেশের পরমাণু বিজ্ঞানীদের খুন বৈশ্বিক আধিপত্যের চরম লঙ্ঘন।’
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের দিকে ইরানের তৎপরতায় সৃষ্ট উদ্বেগের মধ্যেই দেশটির শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীকে খুন করা হলো।
বেসামরিক পর্যায়ে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম।
২০১৫ সালে ছয়টি বিশ্বশক্তির সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করে ইরান, যাতে সীমার মধ্যে ইউরেনিয়াম উৎপাদন করতে দেশটিকে বলা হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর চুক্তির কিছু শর্ত ভঙ্গ করে আসছে ইরান।
সিআইয়ের সাবেক প্রধান জন ব্রেনান বলেন, ফাখরিজাদেহকে খুন ‘অপরাধমূলক’ ও ‘চরম বেপরোয়া’ কাজ।
ব্রেনান টুইট বার্তায় বলেন, ফাখরিজাদেহ হত্যায় মারাত্মক প্রতিশোধ নেয়া ও অঞ্চলটিতে নতুন করে সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
ব্রেনান বলেন, অন্য দেশের সরকারের সম্মতিতে বা অংশগ্রহণে ফাখরিজাদেহকে হত্যা করা হয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না।
শুক্রবার ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন প্রতিষ্ঠানের প্রধান মোহসেন ফাখরিজাদেহকে বহন করা গাড়িকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।
‘তার দেহরক্ষী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর গুরুতর আহত ফাখরিজাদেহকে হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ফাখরিজাদেহর মৃত্যু হয়েছে।’