বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

২০২৪ সালে ক্ষমতায় আসবেন ট্রাম্প?

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২০ নভেম্বর, ২০২০ ০৯:৩৮

হোয়াইট হাউজ ছাড়ার পর কী করবেন এই রিপাবলিকান নেতা?

যুক্তরাষ্ট্রে এবারের ভোটে ডনাল্ড ট্রাম্পের হারের পর তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা। হোয়াইট হাউজ ছাড়ার পর কী করবেন এই রিপাবলিকান নেতা?

ট্রাম্প কি নিজস্ব সংবামাধ্যম প্রতিষ্ঠান খুলবেন? রিপাবলিকান পার্টির ‘কিংমেকার’ হিসেবে দায়িত্বপালন করবেন? আসছে এমন প্রশ্ন।

এমন গুঞ্জনও উঠছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনেও লড়ার সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প। একবার দায়িত্ব পালন করায় সাংবিধানিকভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফের দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে তার।

ট্রাম্প যদি ফের নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তাতে জয় পান, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে হবে বিরল নজির।

বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টান্ত নেয়া যেতে পারে অতীত থেকে।

দায়িত্বরত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচনে হেরে আবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছে একবারই। এমন নজির গড়া প্রেসিডেন্ট হলেন গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড।

যুক্তরাষ্ট্রে উনিশ শতকের শেষ দিককার রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির মিল আছে অনেক আঙ্গিক থেকেই।

প্রবল রাজনৈতিক মেরুকরণের নির্বাচন, জাতীয় ভোট ব্যবস্থায় শক্তিশালী আঞ্চলিক কাঠামো, ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও কাদা ছোড়াছুড়ির প্রচারে যেন দারুণ মিল।

নিউ ইয়র্কের গভর্নর হিসেবে দুই বছরের কম সময় দায়িত্ব পালন করতেই ১৮৮৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে যান ডেমোক্র্যাট ক্লিভল্যান্ড।

গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় সে সময়ে নিউ ইয়র্ক সিটির ‘ট্যামানি হল’ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে সুনাম অর্জন করেন ক্লিভল্যান্ড।

প্রথমবার ক্লিভল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ছিল রিপাবলিকান প্রার্থী জেমস ব্লেইন।

ওই নির্বাচনে নারী কেলেঙ্কারির মুখেও পড়েন ক্লিভল্যান্ড। মারিয়া হ্যালপিন নামের এক নারী অভিযোগ তোলেন, ক্লিভল্যান্ডের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের খবরে কিছুটা বিতর্কিত হলেও পরিস্থিতি সামাল দিয়ে জয় তুলে নিতে সমস্যা হয়নি ক্লিভল্যান্ডের। ভোটের ব্যবধানে সামান্য এগিয়ে থাকলেও ২১৯টি ইলেকটোরাল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন। রিপাবলিকান প্রার্থী জেমস ব্লেইন পান ১৮২টি ইলেকটোরাল।

নির্বাচনে ক্লিভল্যান্ডকে সমর্থনের মূল ঘাঁটি ছিল দক্ষিণাঞ্চল ও তার নিজ অঙ্গরাজ্য নিউ ইয়র্ক। এ ছাড়া প্রতিপক্ষ শিবির উত্তরাঞ্চলের অঙ্গরাজ্যগুলোতে ভালো করতে পারেনি।

ওই নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। ভোট দেন ৭৭.৫ শতাংশ ভোটার।

ক্লিভল্যান্ডের ক্ষমতার সময়টায় শুল্ক আরোপের বিষয়টি আমেরিকার রাজনীতিতে হয়ে ওঠে বিভাজনকারী পক্ষপাতিত্বমূলক ইস্যু। উত্তরাঞ্চলের উৎপাদন স্বার্থ রক্ষায় পণ্যদ্রব্যের ওপর উচ্চ শুল্কের পক্ষে মত তুলে রিপাবলিকানরা।

কিন্তু ক্লিভল্যান্ডের মতো ডেমোক্র্যাটরা দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিভিত্তিক রফতানিমূলক পণ্য সামগ্রীর স্বার্থে কম শুল্ক ও গ্রাহকদের জন্য কম দাম নির্ধারণের পক্ষে অবস্থান নেয়।

এই বিতর্কের মাঝেই আসে ১৮৮৮ সালের নির্বাচন। এবার রিপাবলিকান প্রার্থী বেঞ্জামিন হ্যারিসনের মুখোমুখি হন ক্লিভল্যান্ড। কিন্তু পুনর্নির্বাচিত হতে পারেননি তিনি।

ভোটের শতাংশে সামান্য এগিয়ে থাকলেও ইলেকটোরাল কলেজের হিসাবে অল্প ব্যবধানে হেরে যান হ্যারিসনের কাছে। ১৮৮৪ সালের নির্বাচনে জয় পেলেও সেবার হার দেখতে হয় ইন্ডিয়ানা ও নিউ ইয়র্কে। তাতে গদিছাড়া হন ক্লিভল্যান্ড।

নির্বাচনে হারের পর নিউ ইয়র্কে অ্যাটর্নির দায়িত্বে ফিরে আসেন ক্লিভল্যান্ড। নতুন প্রেসিডেন্ট হ্যারিসনের অধীনে কংগ্রেস অনুমোদন দেয় আলোচিত ‘ম্যাককিনলে ট্যারিফ’ ও ‘দ্য শেরমান সিলভার পারচেজ অ্যাক্ট’।

দুটি বিলেরই তীব্র বিরোধিতা করেন ক্লিভল্যান্ড।

এরপর দুই বছর জনসমাগম এড়িয়ে চলার পর ১৯৯১ সালে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হন তিনি। প্রেসিডেন্ট হ্যারিসনের নেয়া অর্থনৈতিক নীতির জোর সমালোচনা করতে থাকেন। ওই বছরই স্বর্ণ মূল্যমান সমর্থন করে একটি খোলা চিঠি লিখে দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ক্লিভল্যান্ড।

১৮৯২ সালে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ক্লিভল্যান্ড। সে সময় অসাধারণ কিছু বক্তব্য দেন। আবারও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে চান ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন।

ওই বছরের জুনে দলের জাতীয় সম্মেলনে সর্বসম্মতভাবে সমর্থন পেয়ে যান ক্লিভল্যান্ড।

ভোটের লড়াইয়ে তিনি ও ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টির হ্যারিসনের পাশাপাশি সেবারের নির্বাচনে বেশ প্রভাব নিয়েই লড়াই করেন পপুলিস্ট পার্টির প্রার্থী জেমস বি ওয়েবার।

কিন্তু জয়ের হাসি হাসেন ক্লিভল্যান্ডই। এবার ভোটের শতাংশে হ্যারিসনকে হারান ৪৬-৪৩ ব্যবধানে। জিতে নেন অধিকাংশ ইলেকটোরাল কলেজ।

প্রেসিডেন্টের আসনে থেকেও নির্বাচন করে হেরে যাওয়ার পর আবার কীভাবে জেতা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ গণতন্ত্রের ইতিহাসে ক্লিভল্যান্ডই তা করে দেখিয়েছেন।

পরে ক্লিভল্যান্ডের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন আরও অনেকে। কিন্তু কেউই পারেননি। ক্ষমতায় থেকেও ১৮৪৪ সালে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার চেষ্টায় হারেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মার্টিন ফন বুরেন। চার বছর পর ১৮৪৮ সালে ফের মনোনয়ন পেয়েও জিততে পারেননি তিনি।

একই ভাগ্য বরণ করতে হয় মিলার্ড ফিলমোরকে। ১৮৫২ সালে প্রেসিডেন্ট জ্যাচারি টেইলরের মৃত্যুতে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর উইগ পার্টির টিকিটে পুরো মেয়াদের জন্য ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যর্থ হন। চার বছর পর আমেরিকান পার্টির টিকিট নিয়ে লড়ে আবারও হার দেখেন।

প্রেসিডেন্ট হয়ে পরের নির্বাচনে হেরে তৃতীয়বার লড়ে আবার ক্ষমতায় আসতে ব্যর্থ হন থিওডর রুজভেল্টের মতো নেতারাও।

এ ক্ষেত্রে রিচার্ড নিক্সনের গল্পটা ব্যতিক্রম। প্রেসিডেন্ট ডিউইট ডি আইজেনআওয়ারের ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ১৯৬০ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচন করে হারেন তিনি। এরপর ১৯৬২ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নির্বাচনে হারেন তিনি।

পর পর দুটি হারের পরও নিক্সন পরিবার সংবাদমাধ্যমকে বলতে শুরু করে, ‘তোমরা নিক্সনকে ফেলে দিতে পারবে না।’ পরে তাই হলো। ১৯৬৮ সালে রিপাবলিকান পার্টির টিকিটে প্রেসিডেন্ট হন তিনি।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে থেকেও পুনর্নির্বাচিত হওয়ার লড়াইয়ে হেরে আবার ক্ষমতা আসার সুযোগ পাওয়া শেষ ব্যক্তি জেরার্ড ফোর্ড। তবে তিনিও ব্যর্থ হন।

১৯৭৬ সালে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার লড়াইয়ে হারার চার বছর পর ফের দলের মনোনয়ন পান ফোর্ড। ১৯৮০ সালের নির্বাচনে হারেন এ রিপাবলিকান নেতা।

এসব দৃষ্টান্তই বলছে, ২০২৪ সালে ফের মনোনয়ন পেলেও ট্রাম্পের জয় না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

অতীতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছাড়ার পর অধিকাংশ নেতাই অনেকটা আলোচনার বাইরে থেকেছেন। নিজেদের উত্তরসূরির সমালোচনা করার ব্যাপারটিও এড়িয়ে গেছেন।

ট্রাম্পের ক্ষেত্রে কী হবে, সে প্রশ্নের উত্তর সময়ের হাতে ছেড়ে দেয়াই শ্রেয়।

এ বিভাগের আরো খবর