বিজেপির ‘হিন্দুত্ব’ কার্ডের বদলা তৃণমূলের ‘বাঙালিয়ানা’। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটের আগে এই নিয়েই প্রচার-পাল্টা প্রচার তুঙ্গে। বিজেপির হয়ে ভোটের দায়িত্বে অবাঙালিরা আসতেই তৃণমূল বাঙালিয়ানাকেই বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে।
সামনের বছর এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভোট। এবারে মূল লড়াই ক্ষমতাশীন তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির। বাম ও কংগ্রেসের জোট লড়াইয়ের ময়দানে থাকলেও তাদের ক্ষমতা সীমিত।
তৃণমূল ও বিজেপি উভয়ই ক্ষমতা দখলের জন্য ইতিমধ্যেই ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে। তৃণমূলের ভোটের প্রচারে রাজ্যের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি প্রধান হাতিয়ার। বিজেপি ইস্যু করছে কেন্দ্রে মোদি সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কর্মসূচিকে।
বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের জন্য ইতিমধ্যেই সংগঠনকে চাঙ্গা করতে উদ্যোগী হয়েছে। দলের তরফে দিল্লি থেকে পাঁচ নেতাকে পাঠানো হয়েছে পশ্চিবঙ্গে।
গোটা রাজ্যকে পাঁচটি জোনে ভাগ করে বুধবার থেকেই সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধির কর্মসূচি শুরু হয়েছে। পাঁচ জনই অবাঙালি। এদের মাথার ওপরে আরও তিন জন রয়েছেন। তারাও অবাঙালি
এখন থেকে নিয়মিত পশ্চিমবঙ্গে আসবেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ওবিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা। বিজেপির প্রচারে প্রধান মুখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনিও আসবেন ভোট প্রচারে।
দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘ভোটে জিতে পশ্চিমবঙ্গকে গুজরাট বানাবে বিজেপি।’
আর এটা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। তৃণমূলের অভিযোগ, বাংলাকে অসম্মান করছে বিজেপি।
পাল্টা জবাব দিয়েছে বিজেপিও। দলের নেত্রী ডা. অর্চনা মজুমদার বলেন, ‘দিলীপবাবু চেয়েছেন গুজরাটের উন্নয়ন মডেলকে। তৃণমূলের আমলে বাংলা তো পিছিয়ে পড়ছে।’
বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের ভোট কৌশল রচনায় অবাঙালিদের অগ্রাধিকার দেয়ায় সমালোচনামুখর সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা অপদার্থ। তাই দিল্লি থেকে নেতা পাঠাতে হচ্ছে।’
তৃণমূলের যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, ‘বাঙালিকে অসম্মান করা হচ্ছে হাওয়াই চটি পায়ে দেওয়া টালির ঘরের বাসিন্দা বাংলার নেত্রী মমতা ব্যানার্জিকে হারাতে হিন্দিভাষীদের ভাড়া করছে বিজেপি।’
বিজেপি অবশ্য তৃণমূলের কটাক্ষকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। ডা. মজুমদার বলেন, ‘ব্যাপক দুর্নীতি, অনুন্নয়ন ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতির বিরুদ্ধে মানুষ রায় দিতে চলেছেন। সেই রায় নিতেই সর্বভারতীয় দল বিজেপি নিজেদের সংগঠনকে চাঙ্গা করছে।’
এদিনই তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনকে জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণার দাবি জানান।
বিজেপির কটাক্ষ, ‘বাঙালিয়ানাকে উসকে দিতেই মমতার সস্তার রাজনীতি। নেতাজিকে বিজেপিই সম্মান জানিয়েছে সবচেয়ে বেশি।’
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় বলেন, ‘বিজেপির জন্মই বাংলায়। ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জন্ম নেওয়া জনসংঘই আজকের বিজেপি। তাই বাঙালি তার ঋণশোধ করবে বিজেপিকে ক্ষমতায় এনে।’