বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কোল থেকে কেড়ে নিয়ে শিশু বিক্রি

  •    
  • ১৬ নভেম্বর, ২০২০ ১৩:০৮

কেনিয়ায় শিশুপাচার নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য পরিসংখ্যান, সরকারি প্রতিবেদন বা বড় ধরনের কোনো জাতীয় জরিপ নেই। হারিয়ে যাওয়া শিশুদের খোঁজা ও কালোবাজারে অনুসরণ করার দায়িত্বে যেসব সংস্থা আছে, তাদের পর্যাপ্ত উপকরণ ও কর্মকর্তা নেই।

লরেন্স জোসিয়াহ। বয়স ১০ বছর। কোথায় সে থাকে, তা জানেন না মা রেবেকা।

জোসিয়াহ থাকতে পারে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি কিংবা অন্য কোথাও। তবে তার নাইরোবির বাসিন্দা মায়ের বিশ্বাস, ছেলে আর বেঁচে নেই।

রেবেকার বয়স যখন ১৫ বছর, তখন তার মা ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হন। স্কুল ছাড়তে হয় রেবেকাকে। শুরু হয় রাস্তার জীবন।

সে সময় এক বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয় রেবেকার, যিনি তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা করে রেবেকাকে ছেড়ে চলে যান ওই ব্যক্তি। ২০১০ সালে জন্ম হয় জোসিয়াহর।

জেট ফুয়েল মানুষকে নিদ্রালু করে ভিক্ষা চাইতে সহযোগিতা করে। ছোট সন্তান নিয়েই রেবেকা ওই নেশা করা শুরু করেন।

২০১১ সালের মার্চে এক রাতে যথারীতি নেশা করেন রেবেকা। পরদিন ঘুম ভেঙে দেখেন, প্রায় দেড় বছরের জোসিয়াহ তার পাশে নেই। এর পর থেকে ছেলের মুখ আর কখনো দেখেননি রেবেকা।

কান্না সামলাতে সামলাতে রেবেকা বলেন, ‘এখন আমার আরও তিন সন্তান আছে। কিন্তু জোসিয়াহ আমার প্রথম সন্তান, যে আমাকে মাতৃত্বের অনুভূতি দিয়েছিল। কিয়াম্বু, কোয়েলের সব শিশুকেন্দ্রে আমি খোঁজ করেছি। কোথাও তাকে খুঁজে পাইনি।’

রেবেকা জানান, তার সবচেয়ে ছোট মেয়েকেও একবার এক ব্যক্তি তুলে নিয়ে গিয়েছিল। পরে সে তাকে ফিরিয়ে দেয়।

ওই ব্যক্তি দাবি করেন, এক বছর বয়সী ওই শিশু নাকি তাকে পানীয় কিনে দিতে বলেছিল।

নাইরোবির রাস্তায় রাস্তায় রেবেকার মতো কাহিনী খুঁজে পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের আগস্টে এসথার নামের আরেক নারীর তিন বছরের ছেলে হারিয়ে যায়।

এসথার বলেন, ‘ছেলে হারানোর পর আমার জীবনে আর সুখ নেই। মোম্বাসায় গিয়েও তার খোঁজ নিয়েছি, পাইনি।’

পাঁচ বছর আগে মধ্যরাতে ক্যারোলের দুই বছরের ছেলেকে কেড়ে নিয়ে যায় কয়েকজন।

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি তাকে খুব ভালোবাসতাম। ছেলেকে ফেরত দিলেই আমি তাদের ক্ষমা করে দেব।’

এ বিষয়ে বিবিসির টিভি প্রোগ্রাম ‘আফ্রিকা আই’ টানা এক বছর অনুসন্ধান চালায়। অনুসন্ধানে গৃহহীন মায়েদের কাছ থেকে সন্তান কেড়ে নেয়া ও বিশাল মুনাফায় তাদের বিক্রির প্রমাণ পাওয়া যায়।

আফ্রিকা আই টিমের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘শিশু পাচারের সঙ্গে সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তারাও জড়িত। তাদের ধরতে আমরা এক হাসপাতাল কর্মকর্তার কাছ থেকে একটি শিশু কিনি। আমাদের কাছে সরাসরি বিক্রির আগে ওই কর্মকর্তা দুই সপ্তাহ বয়সী ছেলে শিশুটিকে হেফাজতে রাখার বৈধ কাগজপত্রের ব্যবস্থা করেছিলেন।’

কেনিয়ায় সুবিধাবাদী থেকে শুরু করে সংঘবদ্ধ অপরাধীরা শিশু চুরির সঙ্গে জড়িত। প্রায়ই তারা একসঙ্গে কাজ করে। এদের মধ্যে রয়েছেন আনিতা নামের মাদকসেবী এক নারী।

আনিতার এক বন্ধুর সহায়তায় তার খোঁজ পায় আফ্রিকা আই। রাস্তায় থাকা শিশুদের চুরি করতে আনিতা নানা পন্থা অবলম্বন করে বলে জানায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বন্ধু।

তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা জানে কি না, তা বোঝার জন্য কখনো মায়েদের সঙ্গে শুরুতে কথা বলে নেন আনিতা। আবার কখনো মায়েদের মাদক, ঘুমের ওষুধ বা আঠা খাওয়ান আনিতা। কখনো শিশুদের সঙ্গে খেলাও করেন তিনি। এমন অনেক উপায়ে শিশু চুরি করেন আনিতা।’

সম্ভাব্য ক্রেতার পরিচয় দিয়ে নাইরোবির উপকণ্ঠের এক মদের দোকানে আনিতার সঙ্গে দেখা করে আফ্রিকা আই। আনিতা জানায়, শিশু চুরি বাড়াতে দলপ্রধান তাকে চাপ দেয়।

আনিতা বলেন, ‘মাত্র গৃহহীন হয়েছেন, বিভ্রান্ত, কী হচ্ছে বুঝতে পারছেন না, এমন মা আমার ওপর আস্থা রাখেন; তার শিশুকে আমার কাছে রেখে যান।’

আনিতা জানান, তার দলনেতা স্থানীয় নারী ব্যবসায়ী। ছোটখাটো অপরাধীদের কাছ থেকে চুরি করা শিশু কিনে বেশি দামে বিক্রি করেন ওই ব্যবসায়ী।

‘কয়েকজন ক্রেতা বন্ধ্যা। তারা শিশুদের দত্তক নেন। আবার কয়েকজন ক্রেতা শিশুদের উৎসর্গের কাজে ব্যবহার করেন। ওইসব শিশুরা রাস্তা থেকে হারিয়ে যায়, পরে তাদের কখনো দেখা যায় না।’

একটি শিশুকে বিক্রির পর তার ভাগ্যে কী হবে, এ বিষয়ে তেমন একটা জানেন না আনিতা। কন্যা শিশুর জন্য ৫০ হাজার শিলিং আর ছেলে শিশুর জন্য ৮০ হাজার শিলিং দরে ওই ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন তিনি।

কেনিয়ায় শিশুপাচার নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য পরিসংখ্যান, সরকারি প্রতিবেদন বা বড় ধরনের কোনো জাতীয় জরিপ নেই। হারিয়ে যাওয়া শিশুদের খোঁজা ও কালোবাজারে অনুসরণ করার দায়িত্বে যেসব সংস্থা আছে, তাদের পর্যাপ্ত উপকরণ ও কর্মকর্তা নেই। ‘মিসিং চাইল্ড কেনিয়া’ নামের এক বেসরকারি সংস্থা গত চার বছরে নিখোঁজ হওয়া প্রায় ৬০০টি শিশুর ঘটনা নিয়ে কাজ করছে।

সংস্থাটির প্রধান মারিয়ানা মুনিয়েন্ডো বলেন, ‘কেনিয়ায় এটি অনেক বড় ঘটনা। কিন্তু এ নিয়ে প্রতিবেদন হয় না তেমন। সমস্যার গভীরে যাওয়া তো দূরের কথা, উপরিতলেই আঁচড় কাটতে পারিনি আমরা।

‘এর বড় কারণ রেবেকার মতো নারীরা অসহায় ও অবলা। এতে করে সংবাদমাধ্যম বা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হন তারা।’

এ বিভাগের আরো খবর