পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারিকে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তেজনা তুঙ্গে। কলকাতার গণমাধ্যমেও শুভেন্দু এখন খবরের শিরোনাম।
শুভেন্দু অধিকারি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবহণমন্ত্রী। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা। দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম এলাকায় তিনিই অবিসংবাদিত নেতা। বহুবার প্রমাণিত।
শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারি ভারতের সাবেক মন্ত্রী, জাতীয় সংসদের বর্তমান সদস্য এবং মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি। অধিকারি পরিবারের আরেক সদস্য, শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু ভারতের জাতীয় সংসদের সদস্য।
এই পরিবারের আরেক ভাই সৌমেন্দুও রয়েছেন পুরসভার দায়িত্বে। সবই হয়েছে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির ইচ্ছেতে। কিন্তু বর্তমানে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে টানাপোড়েন চলছে অধিকারি পরিবারকে নিয়ে।
এই টানাপোড়েন প্রশ্রয় দিচ্ছেন শুভেন্দু নিজেই। সম্প্রতি 'বিজয়া সম্মিলনী' বা অন্য কোনো 'অরাজনৈতিক কর্মসূচি'র নামে সরাসরি উপেক্ষা করছেন দলকে। এমনকি রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকেও আসছেন না তিনি।
তাঁর কোনো কর্মসূচিতেই মমতা ব্যানার্জির নাম পর্যন্ত নিচ্ছেন না। শুভেন্দুর কণ্ঠে শোনা গিয়েছে বিজেপির প্রচলিত স্লোগান, 'ভারতমাতা কী জয়'। তাই জল্পনা বাড়ছে।এই জল্পনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর বাড়িতে ছুটে যান মমতার দূত, ভারতের প্রভাবশালী ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোর। যিনি পিকে নামে পরিচিত। শুভেন্দু না থাকলেও তাঁর বাবা শিশির অধিকারির সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন পিকে।
এই বৈঠক নিয়ে কোনো পক্ষই মুখ খুলতে নারাজ। তবে সুর নরম হয়েছে শুভেন্দুর। ভাষণে এখন মমতার নাম না নিলেও বলছেন 'দলনেত্রী'র কথা। আর এতেই আশার আলো দেখছেন তৃণমূল নেতারা।
তৃণমূল মুখপাত্র সমীর চক্রবর্তীর দাবি, 'শুভেন্দু তৃণমূলেই আছেন। তাকে নিয়ে অযথা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে মিডিয়া।'
আবার বিজেপি সূত্রের খবর, শুভেন্দু বিজেপিতে যোগদান এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আর শুভেন্দু জিতলে যে বিজেপির জয় আরও সহজ হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত রাজ্য বিজেপির সব নেতাই।
শুভেন্দুর বিষয়ে অবশ্য মন্তব্য পেশে বেশ সতর্ক একসময়ে তৃণমূলে 'মমতার ডান হাত' বলে পরিচিত এবং বিজেপির বর্তমান সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায়।তিনি বলেন, 'শুভেন্দু আসবে কিনা জানি না। তবে বহু নেতাই মোদির উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে অংশ নিতে চাইছেন।'
গত বছর ভারতের সাধারণ নির্বাচনের আগে তৃণমূলের একঝাঁক নেতা ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বিজেপিতে যোগ দেন। মুকুল রায়ের নেতৃত্বে দলবদলের হিড়িক পড়ে যায়।
শোনা যাচ্ছে, আগামী বছর এপ্রিল-মে মাসে বিধানসভা ভোটের আগে শুভেন্দু ছাড়াও একঝাঁক নেতা-মন্ত্রী বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। এ অবস্থায় দলের ভাঙন রুখতে হিমশিম খাচ্ছেন তৃণমূল নেতারা।
তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্না বৃহস্পতিবারই বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন বলে খবর রয়েছে। পরে অবশ্য দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত বদল করেন তিনি।
তবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, সবই মিডিয়ার রটনা। তিনি বলেন, মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে সংঘবদ্ধভাবেই রাজ্যবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপির মোকাবিলা করবে তৃণমূল কংগ্রেস।