চার দিন ঝুলে থাকার পর অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল পাওয়া গেল। প্রয়োজনীয় ২৭৯টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট নিশ্চিত করে নির্বাচিত হলেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন। ঝুলে থাকা অঙ্গরাজ্য পেনসিলভেনিয়ায় ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পর ২৭৩টি ইলেকটোরাল কলেজ পেয়ে বাইডেনের জয় নিশ্চিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গোলমেলে হিসাবে গত ৩ নভেম্বর থেকে ফল আটকে থাকে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে জয়-পরাজয় নির্ধারণ না হওয়ায়। অঙ্গরাজ্যগুলোতে প্রথমে ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও পরে ডাকযোগে পাঠানো ব্যালট গণনায় এগিয়ে যান বাইডেন।
ঝুলে থাকা অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে অ্যারিজোনায় ১১, নেভাদায় ৬, জর্জিয়ায় ১৬, পেনসিলভেনিয়ায় ২০, উইসকনসিনে ১০ ও মিশিগানে ১৬ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে।
এর মধ্যে পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান, উইসকনসিন ও নেভাদায় জয় পান বাইডেন। ফলে তিনি ম্যাজিক নম্বর ২৭০-এ পৌঁছে যান।
এই নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকেই অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার এনেছেন কারচুপির অভিযোগ। এই অভিযোগে তিনি মামলাও করেছেন একাধিক। আবার অভিযোগের প্রমাণ দিতে না পারায় দুটি রাজ্যে মামলা খারিজও হয়েছে। তবে আরও অনেক অনেক মামলা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।
- আরও পড়ুন: ট্রাম্প বললেন, এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি
ঝুলে থাকা অঙ্গরাজ্যগুলোতে ভোট গণনা যতই এগিয়ে যাচ্ছিল, ততই উজ্জ্বল হচ্ছিল বাইডেনের সম্ভাবনা। আর সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে ধরে নিয়েই তার নিরাপত্তা জোরদার করে নিরাপত্তা বাহিনী।
বৃহস্পতিবার মিশিগান অঙ্গরাজ্যে জেতার খবর পাওয়ার পরই সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাইডেন বলেছিলেন, ‘গণনা শেষ হলে আমরা মনে করি, আমরা জয়ী হব।’
এবারের ভোট নিয়ে গোলযোগের প্রধান কারণ অতিমাত্রায় ডাকযোগে ভোট। দেশটিতে এ বছর ১০ কোটি মানুষ ডাকযোগে ভোট দিয়েছে। আর কিছু অঙ্গরাজ্যে এসব ভোট গণনায় দেরি হয়েছে।
নির্বাচনের আগে দেশটির জাতীয় জরিপ অনুযায়ী, ৭৭ শতাংশ জয়ের সম্ভাবনা ছিল বাইডেনের। তবে ট্রাম্পের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছিলেন না নির্বাচনি পর্যবেক্ষকরা।
ভোটের দিন ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজের জয়ের ঘোষণাও দেন। সেদিন তিনি বলেন, ‘সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ…বিপুল সমর্থনের জন্য আমেরিকার জনগণকে ধন্যবাদ জানাই। লাখ লাখ মানুষ আমাদের আজ ভোট দিয়েছেন। একদল লোক তারা (ট্রাম্পের ভোটার) যেন ভোট দিতে না পারে, সে চেষ্টা করছে। আমরা তা মেনে নেব না।’
অবশ্য গত কয়েক দিনে ট্রাম্প শিবিরের সুর নরম হয়েছে। ট্রাম্পের দুই ছেলে নিজ দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তাদের অভিযোগ, রিপাবলিকান পার্টি সর্বাত্মকভাবে তার বাবাকে সমর্থন করেনি। যদিও দলের পক্ষ থেকে আবার এসেছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।
- আরও পড়ুন: জো বাইডেন কবে প্রেসিডেন্ট হবেন?
‘ব্যালট’ পোড়ানোর ভুয়া ভিডিও শেয়ারের অভিযোগও উঠেছিল ট্রাম্পের ছেলে এরিক ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। তার শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি ব্যালটের মতো দেখতে ৮০টি কাগজ জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এরিকের দাবি, ওই ব্যালটগুলোতে ট্রাম্পকে ভোট দেয়া ছিল। যদিও পরে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তবে বাইডেন ইলেকটোরাল কলেজ ভোট নিশ্চিত করলেও আইনি জটিলতার শঙ্কা এখনও রয়ে গেছে। কারণ ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।
এর আগে ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। সে সময় জর্জ ডব্লিউ বুশকে জয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য প্রায় এক মাস অপেক্ষা করতে হয়েছিল।