বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ট্রাম্প ক্ষমতা না ছাড়লে কী হবে

  •    
  • ৭ নভেম্বর, ২০২০ ১৯:৪৬

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হেরে গেছেন। কিন্তু তিনি যদি ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকেন, তখন কী হবে? এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে কিছু বলা নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তখন গভীর সংকট দেখা দেবে।

জো বাইডেন জিতে গেছেন। কিন্তু ট্রাম্প এখনও হার স্বীকার করতে রাজি নন। যদি তিনি হোয়াইট হাউজ আঁকড়ে ধরে থাকেন, কী হবে?

প্রথম কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে এ ব্যাপারে কিছুই বলা নেই। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের আড়াইশ বছরের ইতিহাসে এ রকম ঘটনা ঘটেনি; কোনো নজির নেই।

আবার এটাও তো ঠিক যে, যুক্তরাষ্ট্রের আড়াইশ বছরের ইতিহাসে ট্রাম্পের মতো কোনো প্রেসিডেন্টও আসেননি, যিনি বলেছেন, তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছাড়বেন না।

লোকটা যখন ট্রাম্প, সব আশঙ্কার কথাই সবাইকে বিবেচনা করতে হচ্ছে।

নির্বাচনের বেশ কিছুদিন আগে ২৪ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা লজ্জার মাথা খেয়ে ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হেরে গেলে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন কি না। এ প্রশ্নের জবাব ট্রাম্প বিস্ময়করভাবে এড়িয়ে গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে, দেখাই যাক না কী হয়।’

এর পরপরই তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনের ফল আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে।

আদালতে তিনি গিয়েছেন এবং তিনি যে সহজে ক্ষমতা ছাড়বেন না, সেই আভাস দিচ্ছেন একটার পর একটা মামলা ঠুকে নির্বাচনের ভোট গণনা থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের দীর্ঘ প্রথা অনুযায়ী, যখন কোনো প্রার্থী দেখেন যে তার পরাজয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তিনি পরাজয় স্বীকার করে একটা ভদ্রজনোচিত আবেগী বক্তৃতার খসড়া তৈরি করতে শুরু করেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সে রকম কোনো ভাষণের খসড়া তৈরি করছেন না; বরং তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, সোমবার থেকে তার আইনজীবীরা আদালতে মামলা লড়বে।

জো বাইডেনের প্রচারাভিযানের মুখপাত্র এন্ড্রু বেটস একদিন আগে ঠাট্টাচ্ছলে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সরকার হোয়াইট হাউজ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের জোর করে বের করে দেয়ার সামর্থ্য রাখে।’

কিন্তু কথাটা আর ঠাট্টা নাও থাকতে পারে। পরিস্থিতি সেদিকেই গড়াচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

কোনো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা ছাড়তে রাজি না হলে কী হবে, তাকে কীভাবে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হবে, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে কিছু বলা নেই। কাজেই ট্রাম্প যদি গোয়ার্তুমি করে ওভাল অফিসে গ্যাট হয়ে বসে থাকেন,  সে ক্ষেত্রে এফবিআই বা নেভি বাহিনী বা কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যারিকেড ভেঙে হোয়াইট হাউজে ঢুকে ট্রাম্পকে গ্রেফতার করবে কি না, সেই প্রশ্নের কোনো মীমাংসা নেই। তাদের হোয়াইট হাউজে ঢোকার নির্বাহী আদেশই বা কে দেবেন?

ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক পল কোয়ার্ক বলেন, ট্রাম্প ক্ষমতা আঁকড়ে থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্যে বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হবে। একটা পর্যায়ে এই প্রশ্ন উঠবে, তারা কার আদেশ শুনবে। কেননা বলপ্রয়োগই তখন একমাত্র নীতিনির্ধারক বিষয়ে পরিণত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ নিউ হ্যাভেনের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক যশোয়া স্যান্ডম্যান ব্রিটিশ পত্রিকা দি ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, তার মনে হয় না ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানানোর মতো ভুল করবেন। কেননা এটা ট্রাম্পের ভাবমূর্তিকে ধুলায় মিশিয়ে দেবে। তা ছাড়া ট্রাম্প এ রকম অবস্থান নিলে তার নিজের দল এবং যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস থেকেই তুমুল বিরোধিতার মুখে পড়বেন তিনি।

যশোয়া বলেন, ‘প্রথম বাধাটা আসবে কংগ্রেসের তরফ থেকে। তার দলও তাকে বের হয়ে যেতে চাপ দেবে। বলবে, তার পদত্যাগ করা উচিত। ট্রাম্প যদি তারপরও হোয়াইট হাউজে থেকে যেতে চান, সেটা তিনি পারেন। কিন্তু সেটা করে কোনো লাভ নেই। কেননা হোয়াইট হাউস একটা প্রতীক মাত্র। ওটা কোনো ক্ষমতার মসনদ নয়।’

দি ইনডিপেনডেন্টকে ২০১৯ সালে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিউ জার্সির রাটগারস ইউনিভার্সিটির রাজনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক এ রকমই এক পরিস্থিতির সম্ভাবনা উল্লেখ করে বলেছিলেন, সে রকম হলে প্রতিনিধি পরিষদকে হস্তক্ষেপ করতে হবে এবং সেটা হবে এক চরম সাংবিধানিক সংকট।

এ রকম সাংবিধানিক সংকটের কোনো অভিজ্ঞতা যুক্তরাষ্ট্রের কোনোকালে হয়নি। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, যখনই দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রায় সমানে সমান, দুই পক্ষই ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রার্থীরা।

১৯৬০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির বেশ কিছু অভিযোগ উঠলেও জন এফ কেনেডির কাছে হার স্বীকার করে সরে দাঁড়িয়েছিলেন রিচার্ড নিক্সন। ২০০০ সালে আল গোর হার স্বীকার করেছিলেন জর্জ বুশের কাছে। অথচ ফ্লোরিডার ফলাফল নিয়ে তখনও বিবাদ মেটেনি।

এবার সে রকম বিবেচকের মতো আচরণ ট্রাম্পের কাছ থেকে খুব কম লোকই আশা করছেন।

এ বিভাগের আরো খবর