২০২০ শেষ হতে আরও দুই মাস বাকি। তার আগেই এক বছরে অস্ত্র বিক্রির রেকর্ড হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। আগের রেকর্ড ছিল ২০১৬ সালে। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে ন্যাশনাল শুটিং স্পোর্টস ফাউন্ডেশন।
মার্চে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সময় আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি বাড়তে থাকে। জর্জিয়ার স্মারনা শহরের বন্দুকের দোকান অ্যাডভেঞ্চার আউটডোর্সের মালিক এরিক ওয়ালেসের দোকানেও বেড়ে যায় বিক্রি। 'সবাই গ্রোসারি দোকান থেকে আগে খাবার কিনেছে। তারপর গিয়েছে বন্দুকের দোকানে,' দেশটির সংবাদ মাধ্যম সিবিএসকে এমনটাই বলেন ওয়ালেস।
ক্রিসমাস ও নববর্ষের ছুটিতে এই বিক্রি আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাধারণত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে আগ্নেয়াস্ত্রর বিক্রি অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে যায়।
আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির পরিসংখ্যানের বিকল্প হিসেবে ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেসটিগেশনের (এফবিআই) ন্যাশনাল ইন্সট্যান্ট ক্রিমিনাল চেক সিস্টেম (এনআইসিএস) এর বিশ্লেষণ করে এমন প্রবণতা লক্ষ্য করেছে ফাউন্ডেশনটি।
তাদের হিসেব অনুযায়ী এই বছর এক কোটি ৭২ লাখ ক্রেতার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক শেষ হয়েছে। চার বছর আগে এই সংখ্যাটি ছিল এক কোটি ৫৭ লাখ।
মার্চের পর প্রতি মাসেই বেড়েছে বন্দুক বিক্রি। অক্টোবর মাসেই ১৭ লাখ ব্যাকগ্রাউন্ড চেক হয়েছে যা আগের বছর একই মাসের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি।
আগস্টে প্রথমবারের মত বন্দুক কেনেন ৫০ লাখ অ্যামেরিকান। মহামারি ও দেশজুড়ে চলা দাঙ্গা ও লুটপাটই ছিল এর অন্যতম প্রভাবক মনে করছে ফাউন্ডেশন।
নির্বাচনের বছরে সাধারণত বন্দুকের বিক্রি বেশি হয় জানিয়ে এক বিবৃতিতে ন্যাশনাল শুটিং স্পোর্টস ফাউন্ডেশন বলে, 'পুলিশের বাজেট কমানোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থেকেও বাড়তে থাকে বন্দুকের বিক্রি।'
বন্দুক বিক্রেতা ওয়ালেস জানান এপ্রিল-মেতে বিক্রিতে কিছুটা মন্দা দেখা গেলেও তার পরের প্রতি মাসে বেড়েছে বন্দুকের বিক্রি।
'মূলত নাগরিক বিক্ষোভ ও পুলিশের বাজেট কমানোর খবরে বন্দুকের বিক্রি বেড়ে যায়। নিজেদের বাড়িঘর ও পরিবারের সুরক্ষা করার চিন্তা করা শুরু করেন সবাই'- বলেন ওয়ালেস।
'আমরা সবাই জানি বাইডেন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর করার চেষ্টা করবেন'- যোগ করেন ওয়ালেস। তার দোকানে শতকরা ৪০ থেকে ৬০ ভাগ ক্রেতা প্রথমবার বন্দুক কিনেছেন।
অ্যাসল্ট রাইফেল ও উচ্চ ক্ষমতার ম্যাগাজিনের বিক্রি কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। অ্যামেরিকানরা প্রতি মাসে কতগুলো আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে পারবেন সেটি নির্দিষ্ট করে দেয়ার পক্ষে তিনি।
বিক্রি বাড়ার ফলে লাভজনক অবস্থায় আছে আগ্নেয়াস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্টুর্ম রুগার অ্যান্ড কোংয়ের বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ১৪ কোটি ৬০ লাখ ডলারের আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করেছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৩ শতাংশ বেশি।
স্টুর্ম রুগার বছরের প্রথম নয় মাসে ৪০ কোটি ডলার আয় করেছে যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৩০ কোটি পাঁচ লাখ ডলার।
পুলিশের বাজেট কমিয়ে দেয়ার ঘোষণায় বিক্রি বেড়েছে বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার কিলয়ও। তিনি করেন, ‘মহামারির পর নিজেদের ও ঘরবাড়ির সুরক্ষা নিয়েও চিন্তিত ছিল মানুষ।'