দুয়ারে কড়া নাড়ছে ৩ নভেম্বর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।
ট্রাম্পকেই আবার দেখা যাবে প্রেসিডেন্ট- বছরজুড়ে এই আলোচনাটিই সবচেয়ে বেশি হয়েছে। যদিও শেষ মুহূর্তের হিসেব নিকেশে ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আছেন বেশ এগিয়ে।
বলা হয় ৫০টি স্টেট নয়, গুরুত্বপূর্ণ স্টেট তথা সুইং স্টেটগুলোতে জয়ের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে বিজয়। কারণ, পপুলার ভোটই শেষ কথা নয়, ডিসেম্বরের ইলেটোরাল কলেজের ভোটের উপরই নির্ভর করছে বিজয়। এক্ষেত্রে ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত সুইং স্টেটগুলোতে বাইডেনের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
অনেক ডেমোক্র্যাট বার্নি সমর্থক যারা স্লিপিং বাইডেনে ভরসা রাখতে পারছিলেন না তাদের জন্য বাইডেন ভালো চমকই রাখতে পারেন।
আরলি ভোটিংয়ে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সিনএনএন-এসএসআরএসের জরিপে ৬৪ শতাংশই জো বাইডেনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের পক্ষে রায় দিয়েছেন ৩৪ শতাংশ। এখনো পর্যন্ত ভোট দেননি, অথচ আরলি ভোটিংয়ে অংশ নিতে চান এমন ভোটারদের ৬৩ শতাংশই জো বাইডেন সমর্থক। অন্যদিকে ট্রাম্পের সমর্থক ৩৩ শতাংশ।
হাফ টাইম শেষে করোনা এখন সেকেন্ড ইনিংস শুরু করেছে। কিন্তু এর মধ্যেও ভোটারদের উৎসাহের শেষ নেই। শত বছরের ইতিহাসে এবার সর্বাধিক ভোটার আরলি ভোটিংয়ে অংশ নিয়েছেন। ভোটদানের এই অতি উৎসাহই বলে দেয় এটি অন্যবারের মতো কোনো স্বাভাবিক নির্বাচন নয়।
ট্রাম্প বিরোধীরা এবার আর ২০১৬ সালের ভুল করতে রাজি নন। তারা বলছেন, যে অদ্ভুত গাধার পিঠে গত চার বছর দেশ চলেছে তা থেকে আমেরিকার গণতন্ত্রকামী শিক্ষিত মানুষ মুক্তি চায়।
ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান অনেকটাই ফ্যাসিস্ট চেহারা নিয়েছে মধ্যবিত্ত জনমনে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো ক্ষমতাধর শক্তিশালী একটি দেশের আইডল প্রেসিডেন্ট হওয়ার মতো যোগ্য মানুষ ট্রাম্প কিনা- সে প্রশ্ন অনেকেরই।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা ধরনের হিসাব, বিশ্লেষণ।
অভিবাসীদের প্রতি তীব্র ঘৃণা, মেক্সিকানদের রেপিস্ট ড্রাগ ডিলার (যদিও এগুলো একেবারে মিথ্যা নয়, কিন্তু একজন রাষ্ট্রপ্রধানের মুখে সত্যিই বেমানান) বলা তীব্র সমালোচিত হয়েছে। আর তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো তো ট্রাম্পের ভাষায় শিট হোল্ড কান্ট্রি! রয়েছে মুসলিম বিদ্বেষ। প্রশ্ন উঠেছে তার মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়েও। এমনকি তার আপন ভাতিজিও নিজের বইয়ে ট্রাম্পের মানসিক স্বাস্থ্য ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে খোলামেলা বলেছেন।
মহামারির এই বছরে ট্রাম্পের বালখিল্য আচরণের শেষ ছিল না। কোভিড নাইনটিনে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ও অর্থনীতির অচলবস্থার সতর্কবার্তা ট্রাম্প শুরুতেই পেয়েছিলেন, অথচ তিনি গোপন করেছেন, সময়মতো নেননি উপযুক্ত ব্যবস্থা। যে কারণে প্রাণ হারিয়েছে সোয়া লাখ মানুষ, ৯০ লাখ মানুষ আক্রান্ত। ডেমোক্র্যাটরা এ জন্য সরাসরি ট্রাম্পকেই দায়ী করছে।
নিউ ইয়র্কের গভর্নর এন্ড্রু কুমো তার প্রায় প্রতিটি ভাষণেই ট্রাম্পের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন। জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের নামে কথিত দুর্নীতি অভিযোগ তোলার পাশাপাশি বাইডেন দুর্নীতিপরায়ণ সেটা প্রমাণ করতেও কম ছেলেমানুষী করেননি ট্রাম্প।
তবে এসবেও ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থকদের ভালবাসা কমেনি। এসব নিরব ভোটার সময়মতো তাদের ভোট ট্রাম্পকেই দেবেন। ডেমোক্র্যাটদের ইন্ধনে যে ‘ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার’ আন্দোলন হয়েছে সেটির প্রভাবও পড়বে নির্বাচনে।
‘ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার’ আপাত দৃষ্টিতে একটি সুন্দর সাম্যের আন্দোলন হলেও এর অন্ধকার দিকটি শত বছরের নিরাপদ আমেরিকাকে করে দিয়েছে অনেকটা তৃতীয় বিশ্বের মতো অনিরাপদ। পুলিশের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। ফলে জনগণের বিপদ সামনে দেখেও পুলিশ এখন গাড়ি ঘুড়িয়ে না দেখার ভান করে। ডেমোক্র্যাট এই আন্দোলনকে উস্কে দিলেও রিপাবলিকান তথা ট্রাম্প ছিলেন পুলিশের পাশে। নিউ ইয়র্কসহ (যেখানে কিনা ডেমোক্র্যাটদের অন্যতম ঘাঁটি) সব রাজ্যের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ভোট এবার রিপাবলিকানের পক্ষে যেতে পারে।
দুই পক্ষের জোর প্রচার, আগাম ভোট ও অন্যান্য বিষয়গুলো দেখে জো বাইডেনকে সম্ভাব্য বিজয়ী মনে হলেও জয়ের ব্যাপারে ট্রাম্প অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী। নিজের পরাজয় তিনি সহজে মেনে নেবেন বলে মনে হয় না। বাইডেন জয়ী হলে ট্রাম্প শেষ ট্রাম্প কার্ডটির ব্যবস্থা করে ফেলেছেন গিন্সবার্গের স্থলাভিষিক্ত সুপ্রিম কোর্টের নতুন বিচারক এমি কোনিকে নিয়োগের মাধ্যমে।
ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেটগুলোর মধ্যে অন্যগুলোকে বাদ দিলেও ফ্লোরিডা, টেক্সাস এবং পেনসেলভেনিয়ায় জয় পেলেই বাইডেন বিজয়ী হবেন। এক্ষেত্রে পেনসেলভেনিয়া বাইডেনের জন্মস্থান বলে আশাবাদ একটু বেশি।
বাংলাদেশি কমিউনিটির বেশিরভাগ মানুষ ডেমোক্র্যাট পার্টিকে সমর্থন করলেও রিপাবলিকান সমর্থকও কম নেই। তবে শেষ মুহূর্তে দ্বিতীয় স্টিমুলাস বিলকে কেন্দ্র করে সবার মনেই হতাশা কাজ করছে।