বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কীভাবে কাজ করে ইলেকটোরাল কলেজ

  •    
  • ৩১ অক্টোবর, ২০২০ ২২:২৫

ইলেকটোরাল কলেজ নামে এক জটিল পরোক্ষ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এরকম ব্যবস্থা অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পদ্ধতি বুঝতে হলে বুঝতে হবে ইলেকটোরাল কলেজের ভোটাভুটির ব্যবস্থাটিকে। 

আগামী মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন, তখন তারা ভোট দিয়ে এমন কিছু লোককে জেতাবেন, যাদের নাম তারা নিজেরাই শোনেননি, বা যাদের তারা চোখে দেখেননি। তারা ভোট দিয়ে জয়ী করবেন হ্যাগনার মিস্টার অথবা রেক্স টেটার নামের কিছু লোককে।

কারা এরা?

হ্যাগনার মিস্টার ২০০১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের কৃষিমন্ত্রী। আর টেটার হলেন টেক্সাসের এক ধর্মপ্রচারক। এরা দুজনেই ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ছিলেন ইলেকটোরাল কলেজের সদস্য। এদেরকে যারা নির্বাচিত করেছেন, সেই সাধারণ ভোটারদের বেশিরভাগেরই ধারণা ছিল না, এরা কারা।

তাহলে কেন এদেরকে সাধারণ ভোটাররা নির্বাচিত করলেন?

এখানেই আসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জটিল পদ্ধতির বিষয়টি। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ সরাসরি প্রেসিডেন্টকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন না। তারা নির্বাচিত করেন ইলেকটোরাল কলেজ সদস্যদের। এই কলেজ সদস্যরাই নিজেরা প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট বেছে নেন।   

অঙ্গরাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলো বেছে নেন ইলেকটোরাল কলেজের প্রার্থীদের। নির্বাচনের দিনের পর বৈঠকে বসে ইলেকটোরাল কলেজের বিজয়ী সদস্যরা প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করেন।

তাহলে ভোটররা যে ব্যালটে সিল মারেন, সেখানে কার নাম থাকে? প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের নাকি ইলেকটোরাল কলেজের প্রার্থীদের? 

ভোটাররা ব্যালটে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের নাম দেখতে পান বটে, তবে তারা আসলে ওইসব প্রার্থীদের ভোট দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইলেকটরদের নির্বাচিত করেন। যেমন হ্যাগনার মিস্টার ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। আর টেটার ওই বছর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে।

প্রত্যক্ষ ভোটাভুটির ব্যবস্থা না করে যুক্তরাষ্ট্র ইলেকটোরাল কলেজ নামক এরকম জটিল একটি পদ্ধতি চালু করল কেন?

বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইউনিভার্সিটি অব লুইসভিল ম্যাককোনেল সেন্টারের পরিচালক গ্যারি গ্রেগ বলেন, ইলেকটোরাল কলেজ ব্যাখ্যা করা আসলে কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল কলেজ সদস্যের সংখ্যা হয় প্রতিনিধি পরিষদে ওই অঙ্গরাজ্যের যতজন সদস্য নির্বাচিত হন, সেই সংখ্যার সঙ্গে দুই যোগ। কারণ প্রতি অঙ্গরাজ্যে দুজন করে সিনেটর থাকেন।

আমেরিকার সংবিধান যারা রচনা করেছেন, তারা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার মধ্যে একটি ভারসাম্য আনার কথা ভেবেছেন গোড়া থেকে। তারা চেয়েছেন, কোনো কাজ সমাধার জন্যে প্রেসিডেন্টের যাতে নির্বাহী ক্ষমতাও থাকে, আবার একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট হন একজন জনপ্রতিনিধি, যাতে পদটি স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে না ওঠে।

আমেরিকা নামক দেশটির যখন যাত্রা শুরু হয়, তখন এর একেক অঙ্গরাজ্যের জনগোষ্ঠীর স্বার্থ ও মনোভাব ছিল একেক রকম। কারো সঙ্গে কারো মিল বা যোগাযোগ খুব একটা ছিল না। আজকের দিনের মতো যোগাযোগের উপকরণও ছিল না তখন। সকলের কাছে পরিচিত, গ্রহণযোগ্য একজন একক প্রার্থী বেছে নেওয়ার মতো রাজনৈতিক দলীয় ব্যবস্থাও তখন গড়ে ওঠেনি। সেসময় যদি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের ব্যবস্থা চালু করা হতো, সেটা হতো এক বিশৃঙ্খল ব্যবস্থা। নির্বাচন হলে বহু প্রার্থী শেষনাগাদ এতো কাছাকাছি ভোট পেতো যে প্রেসিডেন্ট কে হবেন সেই সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত নিতে হতো পার্লামেন্ট বা প্রতিনিধি পরিষদকেই।

এই সমস্যা কাটাতে অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে যে রফা হয়, সেটারই ফসল ইলেকটোরাল কলেজ। আর এ কারণে কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্বের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়েছে একেক অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল কলেজের সদস্য সংখ্যা।

অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য দেওয়া হয়েছে। তবে সিনেটের ক্ষেত্রে সব অঙ্গরাজ্য সমান দুজন করে সদস্য পেয়েছেন।

ইলেকটোরাল ভোট কেন একদিকে যায়

একেক অঙ্গরাজ্যে ইলেকটোরাল কলেজের সব ভোট একজন প্রার্থীর পক্ষে পড়ে। যে দল সেই অঙ্গরাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইলেকটোরাল আসন জিতেছেন, সেই অঙ্গরাজ্যের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট সেই দলের প্রার্থী পান, তা তারা অল্প ব্যবধানেই জিতুন আর হাজার হাজার বেশি ভোট পেয়েই জিতুন। কেবল নেব্রাসকা এবং মেইন একাধিক প্রার্থীর ইলেকটোরাল সমর্থন অনুমোদন করে।

ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস অ্যামহার্সটের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক আমেল আহমেদ এই ব্যবস্থাকে বেসবল ওয়ার্ল্ড সিরিজের সঙ্গে তুলনা করেছন। তিনি বলেন, ‘যে দল সিরিজে জয়লাভ করে, সেই দলই যে সবচেয়ে বেশি রান করবে এমন না। যে দল সবচেয়ে বেশি গেম জেতে, সেই জয়ী হয়।‘

আহমেদ বলেন, এই ব্যবস্থার ফলে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য, অর্থাৎ যে অঙ্গরাজ্যগুলো একেক বার একেক দলের দিকে ঝোঁকে, সেগুলো প্রার্থীদের ওপর বিপুল প্রভাব রাখতে পারে।

গত ৭০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে যেসব নির্বাচন হয়েছে, তার প্রতিটিই হয়েছে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এ কারণে একবার রিপাবলিকান প্রার্থী জিতেছেন, তো আরেকবার জিতেছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী। এ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থা যতো জটিলই হোক, সেটা কার্যকরী।

নির্বাচনের পথরেখা

৩ নভেম্বরের ভোটাভুটিতে আসলে প্রেসিডেন্ট নন, নির্বাচিত হন ইলেকটোরাল কলেজের প্রার্থীরা। ডিসেম্বরে তারা নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যে সভায় বসেন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ভোট দিতে। এই ভোটাভুটির ফলাফল পাঠানো হয় সিনেটের প্রেসিডেন্টের কাছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টই সিনেটের প্রেসিডেন্ট।

জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে কংগ্রেস বসে ভোট গণনা করে। এরপর সিনেটের প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন। ২০ জানুয়ারি দুপুরে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তার দায়িত্বে শপথ নেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টে পরিণত হন।

এ বিভাগের আরো খবর