ফ্রান্সের নিস শহরে তিন জনকে হত্যার অভিযোগে আটক তিউনিশিয়ার নাগরিক ব্রাহিম আউইসাউই হামলার ১২ ঘণ্টা আগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে তখন তার কথাবর্তায় কোনো সহিংস কর্মকাণ্ডের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
পরিবারের সদস্যদের উদ্ধৃত করে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নিসের নটর ডেম বেসিলিকা গির্জায় ঢুকে ছুরিকাঘাতে দুই নারীসহ তিন জনকে হত্যা করেন ২১ বছর বয়সী ব্রাহিম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার আগের দিন বুধবার রাত ৮টার দিকে ব্রাহিম তিউনিসিয়ায় পরিবারের সদস্যদের ফোন করে তার ফ্রান্সে থাকার কথা জানান।
ব্রাহিমের ভাই বলেন, ‘সে জানায়, ইতালিতে অনেকেই চাকরি খুঁজছে। ফ্রান্সে চাকরির সুযোগ ইতালির চেয়ে ভালো হওয়ায় সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে।’
ব্রাহিমের বোন আফেফ জানান, ঘুমানোর জায়গা খোঁজার সময় নিসের নটর ডেম গির্জার সন্ধান পান ব্রাহিম। ওই রাতে গির্জার উল্টোদিকের একটি ভবনে ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
আফেফ বলেন, ‘ব্রাহিম যে কোনো ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে, সেটা তার কথায় বোঝা যায়নি।’
তিউনিসিয়ার স্ফাকস শহরের কাছে শ্রমিকশ্রেণি অধ্যুষিত থিনা এলাকায় আট বোন ও দুই ভাইয়ের সঙ্গে বড় হন ব্রাহিম।
ইতালির লামপেদুজা দ্বীপ থেকে ৮০ মাইল দূরে স্ফাকস। এই শহর থেকেই তিউনিসিয়ানরা ইউরোপে যান।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, হাই স্কুলে থাকতে লেখাপড়া ছেড়ে দেন ব্রাহিম। রাস্তার ধারে মোটরসাইকেলে পেট্রল ঢালার কাজ শুরুর আগে বাইসাইকেল মেকানিক ছিলেন তিনি।
তিউনিসিয়ার কর্তৃপক্ষ জানায়, মাদক সেবন ও মাঝেমধ্যে উগ্র আচরণের জন্য স্থানীয় পুলিশের নজরে আসেন ব্রাহিম।
ব্রাহিমের মা গামরা ইসাউই বলেন, ‘‘ব্রাহিম মদসহ অন্যান্য মাদক সেবন করত। তাকে বলেছিলাম, ‘আমাদের টাকা নেই। এর মধ্যে তুমি টাকা অপচয় করছ কেন? উত্তরে ব্রাহিম বলতো, ‘যদি ঈশ্বর চায়, তাহলে তিনি আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবেন।”
গত দুই বছর ব্রাহিমের পরিবার তার স্বভাবে পরিবর্তন দেখেন। তিনি নিয়মিত প্রার্থনা ও বাসায় থাকতে শুরু করেন। এ সময় ব্রাহিম পুরনো বন্ধুদের সঙ্গও এড়িয়ে চলা শুরু করেন।
ব্রাহিমের বড় ভাই ইয়াসিন বলেন, ‘তার মধ্যে কখনও উগ্রবাদ দেখিনি। ছোট থেকেই সে অন্যদের সম্মান করত; তাদের ভিন্নমত গ্রহণ করত।’
তিনি জানান, এক সময় স্ফাকস, এমনকি তিউনিসিয়া ছাড়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেন ব্রাহিম। ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালিতে পৌঁছার চেষ্টা করে ব্যর্থও হন।
কিন্তু ব্রাহিম যে আবার ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তা পরিবারের কেউই জানতেন না।
বড় ভাই ইয়াসিন বলেন, ‘ইউরোপে যাওয়ার কথা সে আমাদের বলেনি। যখন সে জানায় যে ইতালিতে পৌঁছেছে, আমরা সবাই অবাক হয়েছিলাম।’
তিউনিসিয়া ও সিসিলির কৌঁসুলিদের ভাষ্য, ১৪ সেপ্টেম্বর ব্রাহিম তিউনিসিয়া ছেড়ে চলে যান। ২০ সেপ্টেম্বর মাছ ধরার ছোট নৌকায় ২০ জন তরুণের সঙ্গে ইতালির লামপেদুজায় পৌঁছান তিনি।
ইতালির তদন্ত কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন ২৩ সেপ্টেম্বর র্যাপসোডি নামের কোয়ারেন্টিন জাহাজের পাঁচ নম্বর ডেকে ছিলেন ব্রাহিম।
কোয়ারেন্টিনে থাকার পর করোনা পরীক্ষায় ফল নেগেটিভ আসে ব্রাহিমের। ৯ অক্টোবর র্যাপসোডি পৌঁছায় ইতালির বারি বন্দরে। সেখানে ছবি তোলার পর নিবন্ধিত হন তিনি। ওই সময় তার কাছে কোনো নথি ছিল না এ কারণে এক সপ্তাহের মধ্যে ইতালি ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয় ব্রাহিমকে। তবে, তাকে নজরদারিতে রাখা হয়নি।
ইতালির ভেনতিমিলিয়া হয়ে ফ্রান্সে প্রবেশ করে থাকতে পারেন ব্রাহিম, এমনটা ধারণা তদন্ত কর্মকর্তাদের।