যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টে নির্বাচনে আগাম ভোট দেয়ার যে ব্যবস্থা রয়েছে, তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ লক্ষ করা যাচ্ছে এবার।
সশরীরে আবার ডাকযোগেও পাঠানো যায় এই ভোট। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এবার সশরীরেও বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারের লাইন দেখা গেছে।
আর মাত্র দুই দিন পর, ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভোট।
১৯৯২ সালে যত আগাম ভোট দেয়া হয়েছিল, এর ২৪ বছর পর, ২০১৬ সালে তার পাঁচ গুণ ভোট পড়ে।
এবার ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবকটিতে ইতিমধ্যে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট পড়েছে।
শুধু সাধারণ ভোটারই নন, বাদ যাননি প্রার্থীরাও। প্রথমে রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও পরে ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন ভোট দিয়েছেন আগেভাগে।
ইউএস ইলেকশনস প্রজেক্ট নামের একটি সাইটের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ৮ কোটি ৫০ লাখ ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। ২০১৬ সালে মোট যত ভোট দেয়া হয়েছিল, তার চেয়ে এ সংখ্যা বেশি।
সাইটটি পরিচালনা করেন ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার অধ্যাপক মাইকেল ম্যাকডোনাল্ড। তিনি অঙ্গরাজ্য অনুযায়ী ও গড়পড়তা আগাম ভোটের ওপর নজর রাখেন।
তার তথ্যমতে, এবার সবচেয়ে বেশি আগাম ভোট পড়েছে ক্যালিফোর্নিয়ায়। ৯১ লাখের বেশি মানুষ আগাম ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।
দ্বিতীয় স্থানে আছে টেক্সাস, সেখানে ভোট পড়েছে ৯০ লাখ। ২০১৬ সালে এই অঙ্গরাজ্যে মোট যত ভোট পড়েছিল, এবার ইতিমধ্যে তা ছাড়িয়ে গেছে। এরপর রয়েছে ফ্লোরিডা, সেখানে ৭৮ লাখ আগাম ভোট দেয়া হয়েছে।
২০১৬ সালের নির্বাচনে মোট যত ভোট দেয়া হয়েছিল, এবার ইতিমধ্যে এর প্রায় ৬২ শতাংশ পড়েছে।
এবার আগাম ভোট দেয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন তরুণরা। টাফটস ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর ইনফরমেশন অ্যান্ড রিসার্চ অন সিভিল লার্নিং অ্যান্ড এনগেজমেন্ট-এর তথ্য অনুযায়ী, ২৬ অক্টোবরের মধ্যে ৫০ লাখ তরুণ ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। এদের বয়স ১৮ থেকে ২৯ বছর।
জনমত জরিপে দেখা গেছে, এবার গত নির্বাচনের চেয়ে অনেক বেশি তরুণ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
২০১৬ সালে, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়েসী ভোটাদের ৪৬ শতাংশ ভোট দেয়। ৭১ শতাংশ ভোট পড়ে যাদের বয়স ছিল ৬৫ বছরের বেশি। হার্ভার্ড ইয়ুথ পোল-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, এবার এই হার হতে পাতে ৬৩।
এবার আফ্রিকার বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে আগাম ভোট দেয়ার ঝোঁক বেশি। ২০১৬ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবার ছয় গুণ কৃষ্ণাঙ্গ ইতিমধ্যে আগাম ভোট দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্য অনুযায়ী, নির্ধারিত ভোটের দিন হাজার হাজার ভোটার ভোট কেন্দ্রে জড়ো হতেন। তারা সেখানে দীর্ঘ সারিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতেন। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বালাই ছিল না।
তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে অনেকে আগাম ভোট দিচ্ছেন। তারা বুথে গিয়ে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকতে চান না। তা ছাড়া অনেক অঙ্গরাজ্যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক নয়। এসব কারণে তরুণরা আগাম ভোট দিতে আগ্রহী।
এবার করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সহজে ভোট দেয়ার জন্য অন্তত ৩০টি অঙ্গরাজ্যে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনেক কেন্দ্রে ব্যালট ড্রপ বক্স রাখা হয়েছে। তাই ভোটারদের ভিড় করতে হচ্ছে না। সারিতে দাঁড়াতে হলেও তারা যথাযথ সামাজি দূরত্ব বজায় রাখার সুযোগ পাচ্ছেন।
তবে আগাম ভোট মানেই একেবারে ঝামেলা মুক্ত, এমনটি নয়। যেমন জর্জিয়ায় হাজার হাজার ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ম্যাকডোনাল্ড বলেছেন, ১৫ কোটি ভোট পড়তে পারে। মোট ভোটারের ৬৫ শতাংশ। যদি তাই হয়, ১৯০৮ সালের পর এবারই সবচেয়ে বেশি ভোটার ভোট দেবেন।
সূত্র: বিবিসি।