জম্মু–কাশ্মীরের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে অর্থের জোগান দিচ্ছে, এই অভিযোগে বুধবার থেকে বেঙ্গালুরু, দিল্লি এবং জম্মু-কাশ্মীরে বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠনের কর্মকর্তা ও দফতরগুলোতে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)।
বৃহস্পতিবার সকালেও অব্যাহত ছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএর অভিযান। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি।
টুইট করে তিনি বলেন, বিরোধী স্বর থামানোর জন্যই সরকার এ কাজ করছে। এনআইএ বিজেপির পোষ্যে পরিণত হয়েছে। বিজেপির কথামতো এনআইএ কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দিল্লি এবং কাশ্মীরের মোট নয়টি ঠিকানায় তল্লাশি হয়েছে বলে এনআইএ সূত্রের খবর। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, তল্লাশির তালিকায় দিল্লি সংখ্যালঘু কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান জাফর উল ইসলামের ঠিকানার পাশাপাশি দিল্লির দুটিসহ মোট ছয়টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দফতরও রয়েছে।
দিল্লির ‘চ্যারিটি অ্যালায়েন্স’ এবং ‘হিউম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’–এর বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশ থেকে আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করে কাশ্মীরের সন্ত্রাসে মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে বলে এনআইএর একটি সূত্রের দাবি। জাফর উল ইসলাম চ্যারিটি গোষ্ঠীর প্রধান। পাশাপাশি তিনি মিল্লি গেজেট নামে একটি সংবাদপত্রের সম্পাদক।
বুধবার বেঙ্গালুরুতে একটি এবং কাশ্মীরের শ্রীনগরে ১০টি এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে এনআইএ। এর মধ্যে ছয়টি এনজিও রয়েছে।
দিল্লির সাবেক সংখ্যালঘু কমিশনের প্রধানের বাড়িতেও তল্লাশি করা হয়েছে। এ ছাড়া শ্রীনগরে সংবাদপত্র গ্রেটার কাশ্মীর–এর মালিকানাধীন সংস্থার দফতরের পাশাপাশি কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, দাতব্য প্রতিষ্ঠান এবং ট্রাস্টের কার্যালয় বা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পরিচালকদের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছে।
কাশ্মীরের মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা পারভেজ খুররমের বাড়ি, তার সংস্থা ‘জম্মু–কাশ্মীর কোয়ালিশন ফর সিভিল সোসাইটি’–এর দফতরে এনআইএ কর্মকর্তারা বুধবার তল্লাশি চালিয়েছিলেন। খুররমের দুই সহযোগী এবং তাঁর বন্ধু স্বাতী শেষাদ্রির বেঙ্গালুরুর বাড়িতেও তল্লাশি হয়।
কাশ্মীরে নিখোঁজদের পরিবারের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ প্যারেন্টস অফ ডিসঅ্যাপিয়ার্ড পার্সনস’–এর প্রধান পারভিনা অহঙ্গেরের বাড়ি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘অ্যাথ্রাউট’, ‘জিকে ট্রাস্ট’-এর দফতরও ছিল তালিকায়।
হারিয়ে যাওয়া কাশ্মীরিদের নিয়ে যে সংগঠনগুলো আন্দোলন করে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কাশ্মীরের একাংশের মানুষের অভিযোগ, সেনা এবং পুলিশ বিভিন্ন সময় গ্রামে ঢুকে পুরুষদের তুলে নিয়ে যায়। পরে আর তাদের খবর পাওয়া যায় না। এ ধরনের মানুষদেরই হারিয়ে যাওয়া কাশ্মীরি বলা হয়।
দীর্ঘদিন ধরেই এ বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন চালাচ্ছে বেশ কিছু সংস্থা। পরিবারগুলোকে আইনি সহায়তা দেওয়ার কাজও তারা করে। তেমন কিছু সংস্থার অফিসেও তল্লাশি চালিয়েছে এনআইএ। সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রয়োজনে আরও রেইড করা হবে।
এনআইএ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই এই তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। তল্লাশি চালিয়ে প্রতিটি জায়গা থেকেই অনেক কাগজপত্র এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এ বিষয়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, রাষ্ট্রদ্রোহসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে।
জম্মু–কাশ্মীরের ‘ফালাহ-ই-আম ট্রাস্ট’, ‘জেকে ইয়েতিম ফাউন্ডেশন’, ‘স্যালভেশন মুভমেন্ট’, ‘জে অ্যান্ড কে ভয়েস অফ ভিকটিমস’–এর মতো কাশ্মীর উপত্যকার পরিচিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর দফতরেও এদিন হানা দেয় এনআইএর টিম।
তল্লাশিতে বেশ কিছু ‘অপরাধমূলক নথি’ এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযানে সংশ্লিষ্ট রাজ্য পুলিশেরও সাহায্য নেওয়া হয়।
এনআইএ জানিয়েছে, প্রয়োজনে আরও তল্লাশি চালানো হবে।