ফ্রান্সের নিস শহরের গির্জায় তিন জনকে হত্যার ঘটনার পর জনগণকে দৃঢ় ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, সন্ত্রাসের কাছে নতি স্বীকার করবে না তার দেশ।
বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
মাখোঁ বলেন, ‘আক্রমণের মুখে ফ্রান্স। নিসে আজকে আমাদের তিন জন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। একই সময় সৌদি আরবের ফরাসি কনস্যুলেটে হামলা চালানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, “শুরুতেই ফ্রান্স ও এর বাইরে বসবাসকারী ক্যাথলিকদের সমর্থন জানাতে চাই। ২০১৬ সালে ফাদার হ্যামেল হত্যার পর আবারও আমাদের দেশের ক্যাথলিকদের ওপর হামলা হয়েছে। খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘অল সেইন্টস ডে’-এর দুই দিন আগে হামলাটি চালানো হয়।”
ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা ক্যাথলিকদের পাশে আছি। আমাদের দেশে স্বাধীনভাবে ধর্ম চর্চা করা হয়। মানুষ এটা বিশ্বাস করুক বা না করুক, সব ধর্মই এখানে স্বাধীনভাবে চর্চা করা হয়। ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের পাশে দেশ আজ একতাবদ্ধ।
‘আমার দ্বিতীয় বার্তা নিসবাসীর উদ্দেশ্যে। ইসলামপন্থি সন্ত্রাসীর মূর্খতার কারণে তারা আজ বেদনাহত। এই নিয়ে তৃতীয়বার সন্ত্রাসবাদ আপনাদের শহরের ওপর আঘাত হেনেছে। জাতি আপনাদের প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানাচ্ছে।’
সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলা নিয়ে মাখোঁ বলেন, ‘আমাদের ওপর যদি আবার হামলা হয়, তবে তা হবে আমাদের মূল্যবোধ, স্বাধীনতার আস্বাদ, বিশ্বাসের অবাধ স্বাধীনতা ও সন্ত্রাসের কাছে কোনোভাবে পরাজয় মেনে না নেয়ার জন্য। আমরা কোনো কিছুর কাছে মাথা নত করব না। সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবিলায় আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি।’
মহানবী হজরত মোহাম্মদের (সা.) কার্টুন দেখানোর জেরে প্যারিসে স্কুলশিক্ষককে হত্যার ১৩ দিন পর বৃহস্পতিবার সকালে নিস শহরের নটর-ডেম বেসিলিকা ক্যাথিড্রালে ছুরিকাঘাতে দুই নারীসহ তিনজন নিহত হন।
ব্রিটিশ গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ১৭ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের ছুরি নিয়ে গির্জাটিতে প্রবেশ করেন হামলাকারী। আধ ঘণ্টার মধ্যে দুইজনকে খুন ও আরেকজনকে গুরুতর আহত করেন তিনি।
নিহতদের একজন ৬০ বছর বয়সী নারী। সকালে গির্জাটি খোলার পরই তিনি প্রার্থনা করছিলেন।
ফ্রান্সের সন্ত্রাসবিরোধী কৌঁসুলি জ্যাঁ- ফ্রাঁসোয়া রিকার্ড জানান, ‘প্রায় শিরশ্ছেদের’ মতো ওই নারীর গলা কাটা হয়েছে।
দ্বিতীয় নিহত ব্যক্তি ভিনসেন্ট লক (৫৫)। তিনি ওই গির্জার সেক্সটন হিসেবে পরিচিত। তারও গলা কাটা হয়েছে।
ব্রাজিলের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, গির্জায় নিহত তৃতীয় ব্যক্তি দেশটির সালভাদোর শহরের সিমোন ব্যারেতো সিলভা (৪৪)। ছুরি দিয়ে কয়েকবার আঘাতের পর গির্জা থেকে পালিয়ে কাছের একটি বারে আশ্রয় নেন তিনি। সেখানেই মৃত্যু হয় তার।
নিস শহরের পুলিশ হামলার পরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছে হামলাকারীকে ছুরি ফেলে দিতে বলে। ‘নির্দেশ না মানায়’ তাকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকবার গুলি চালায় পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে রিকার্ড জানান, হামলাকারীর কাছে তিনটি ছুরি ছিল। দুটি ব্যবহার করা হয়নি। এ ছাড়া তার কাছে কোরআন পাওয়া যায়।
রিকার্ড বলেন, “সকাল ৮টা ৫৭ মিনিটে মিউনিসিপ্যাল পুলিশ গির্জায় ঢোকে। ওই সময় হামলাকারী ‘আল্লাহু আকবর’ বলে চিৎকার করে। তখনই তাকে গুলি করা হয়।”
ফ্রান্সের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলাকারীর নাম ব্রাহিম আউইসাউই। ২১ বছর বয়সী ব্রাহিম তিউনিসিয়ার নাগরিক। অক্টোবরের শুরুতে ইতালির লেমপেদুসা হয়ে অবৈধভাবে ফ্রান্সে প্রবেশ করেন তিনি।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান